Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আতঙ্ক ও ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বারা, সতর্ক থাকার পরামর্শ


২ আগস্ট ২০১৯ ২২:৩৮

ঢাকা: রাজধানীর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী আতিফা আন্জুমান। তিনি এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার ছেলে ও চিকিৎসক স্বামী দুজনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। একদিকে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটোছুটি অন্যদিকে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত আতিফা।

শুক্রবার (২ আগস্ট) সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে আতিফা আন্জুমান জানান, জুলাইয়ের ১২ তারিখে প্রথমে তার নয় বছরের ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়। দুইদিন পর ডেঙ্গু ধরা পড়লে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করান। এর পরের পাঁচদিন তাকে হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা করাতে হয়। পরের সপ্তাহেই আতিফার স্বামী কবিরুল ইসলাম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। ২৫ জুলাই শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকেও হাসপাতালে নিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

আতিফা বলেন, ‘ছেলে আর তার বাবাকে নিয়ে খুব মেন্টাল প্রেশারে আছি। তার ওপর আবার নিজেকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা। সারাদিন ওডোমাস মাখি। পুরো বাড়ি নেটিং করা। খুব জরুরি না হলে বাইরে যাই না। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। আমার গাইনোকলোজিস্ট অবশ্য বলেছেন ভয়ের কিছু নেই। শুধু একটু সচেতন থাকতে হবে। দিনে-রাতে ঘুমালে মশারি ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্ভব হলে কটনের ফুলহাতা জামা কাপড় পড়তে হবে। আর মানসিক চাপ না নিতেও বলেছেন তিনি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মানসিক শান্তি বা স্বস্তিতে থাকা কিভাবে সম্ভব?’

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

সারাদেশে যখন ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ তখন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বাড়তি সচেতনতা ও  সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর দুই তিন জন অন্তঃসত্ত্বা নারী এসেছিলেন, যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তাদের অবস্থা ভালো ছিল। এখন কোনো অন্তঃসত্ত্বা ডেঙ্গু রোগী নেই। তবে এমন ক্ষেত্রে রোগীদের অনেক বেশি সাবধানে থাকতে হবে। সবসময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

‘আমরা বহির্বিভাগ ও গাইনি ওয়ার্ডে আসা রোগীদের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে বলছি। যদি ডেঙ্গু ধরা পড়ে তবে তাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা নড়াচড়া করছে কিনা। ওষুধ খাওয়া অথবা ইঞ্জেকশন দেওয়ার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হবে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে,’ বলেন এই চিকিৎসক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় যদি কারো ডেঙ্গু হয় তবে তা ভয়ের বিষয়। কারণ  এ সময় মায়ের শরীরের তরলের মাত্রা কমে যায়। আর এতে মায়ের পাশাপাশি পেটের সন্তানের শরীরের রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে। বিশেষ করে শেষ তিনমাসের দিকে বা প্রসবকালীন সময়ে মায়ের ডেঙ্গু হওয়াটা বেশি ভয়ের। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের মৃত্যুও হতে পারে। সব থেকে জটিল অবস্থা হবে যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্লেটলেট কমে যাওয়া প্রেগন্যান্ট কারও অপারেশন বা ডেলিভারি করাতে হয়। এমন রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়াও মুশকিল। আমরা আছি মহাবিপদে।’

‘তবে আশার কথা হলো এখনও পর্যন্ত আমরা এমন জটিল রোগী ফেস করিনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত এমন কোনো রোগী আমরা এখনও পাইনি, বলেন তিনি।

‘আমাদের পরামর্শ নিতে আসা অন্তঃসত্ত্বাদের আমরা তাদের চারপাশটা পরিষ্কার -পরিছন্ন রাখতে বলছি। পা আর হাতের অনাবৃত অংশ ঢেকে রাখতে বলছি। কারণ পায়েই মশা কামড় দেয় বেশি। মশার কয়েলের ধোঁয়া থেকে দুরে থাকার পরামর্শও দিচ্ছি। ঘর বা অফিসে অ্যারোসোল বা যেকোনো ধরণের কীটনাশক স্প্রে করার বিশ মিনিট পর তাদের সেই স্থানে যেতে বলছি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনীন আরা এ বিষয়ে বলেন, ডেঙ্গুতে এতো বেশি আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন হওয়া দরকার। কারণ ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে এই ভাইরাস জ্বরে মৃত্যুর হার খুবই কম। ১০০ তে একজন। কিন্তু পরের তিনমাসের অন্তঃসত্বা নারীদের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে এ ধরণের ভাইরাসে মৃত্যুর হার ১০০ তে ২০ জন।  আর তাই সতর্কতা ও সচেতনতা দরকার।

ডা. নাজনীন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উচিত জ্বর এলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রক্তের সিবিসি করানো। এই জ্বরে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্লেটলেট কম এলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া জ্বরের শুরুতে একবার ও চার দিন পর দুই দফায় ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। ওয়ার্নিং কিছু সাইন আছে ডেঙ্গু জ্বরের সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন প্রসাব কমে যাওয়া, দুর্বল লাগা, পেট ব্যাথা, অতিরিক্ত বমি –শরীরের চামড়ায় বা মুখে র‌্যাশ বা মেস্তা জাতীয় লাল ছোপ হতে পারে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার সময়টা সবচেয়ে ভয়ের। এই সময়টা চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে ।

তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় ভয় ব্লিডিং। তাই এ সময় ডেলিভারিতে –নরমাল বা সিজার –দুই ক্ষেত্রেই বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। বিশেষ করে রোগী যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তবে তার জন্য একাধিক ব্লাড ডোনার রেডি রাখতে হবে। ডেলিভারির পরপরই নবজাতককে মনিটর করতে হবে (শিশু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে) । তাছাড়া ডেলিভারির পর  প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। তাই খুব বাধ্য না হলে অন্তঃসত্ত্বা ডেঙ্গু রোগীকে কোনভাবেই অপারেশন বা ব্যাথার ওষুধ দিয়ে ডেলিভারি করানো যাবে না।

 

অন্ত:সত্ত্বা ডেঙ্গু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর