ডেঙ্গু মোকাবিলায় নেতাদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ
২ আগস্ট ২০১৯ ২০:৫৯
ঢাকা: ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতাদের সাংগঠনিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে জেলা/সিটি করপোরেশন, উপজেলা/পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় এমপিদের সাংগঠনিক তৎপরতা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে দলের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা নেতাদের কর্মকাণ্ড নজরদারি করছি। আজ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। আমরা হাসপাতালগুলোতে স্বাচিপ ও বিএমএ সংগঠনের চিকিৎসক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম করে সমস্ত হাসপাতাল মনিটরিং পর্যবেক্ষণ করব।’
পাশাপাশি স্বাচিপ ও বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কয়েকটি বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র খোলার চেষ্টা করা হবে জানান নানক। তিনি জানান, ডেঙ্গুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ সকল সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নেমে পড়ার আহ্বান জানান। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় দলের নেতা এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের কোনোপ্রকার নিষ্ক্রিয়তা বরদাশত করা হবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে এক ঘরোয়া বৈঠক হয়। সেখানে নেতাদের কর্মকাণ্ড নজরদারি করার বিষয়টি কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে আলোচনা হয়।
এদিকে ৩১ জুলাই দেশব্যাপী ‘পরিষ্কার রাখি চারপাশের পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন সমাজ- ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে তিনদিনের এ কর্মসূচি কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচি উদ্বোধনের পরও দলীয়ভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢিলেঢালা প্রচার-প্রচারণায় বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। তাই এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১আগস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সারাদেশে জেলা ও সিটি করপরোশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে টেলিফোন করে প্রধানন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা জানিয়ে অবহিত করা হয়।
এদিকে শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লিফলেট বিতরণ এবং মশক নিধন কার্যক্রমে অংশ নেয় নেতারা। ডেঙ্গু বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনি কী নামে অভিহিত করলেন সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল আজকে ডেঙ্গুর যে অবস্থা, এডিস মশার যে ভয়াবহ উপদ্রুপ এবং তান্ডব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা বাস্তব এবং এটা সত্য। এই বাস্তব সত্যটাকে অস্বীকার করা উপায় নেই। এই ভয়াবহতাকে কোন নামে অভিহিত করতে হবে- এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। আমরা এই বিষয়টাকে কীভাবে নিলাম সেটা দেখার বিষয়, আমরা সিরিয়াসলি নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি একটি মানবিক ক্রাইসিস। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও এডিস মশার বংশবিস্তার বন্ধে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করার জন্য।’
এদিকে চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এরইমধ্যে কয়েক দফা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ডেঙ্গু মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং দেশবাসীকেও নিজ নিজ আবাসস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল ১ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে সামনে শোকের মাসে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করার আহ্বান জানান। আলোচনা সভার প্রধান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীকে মোবাইল যোগে সংযুক্ত করেন। তার ফোনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন, যা মাইকে শোনানো হয়।