ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি পদোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধি না রাখায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষক।
শুক্রবার (২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানানো হয়।
আগামী ৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা সম্পর্কিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিৎ ছিল কিছু বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি সাব-কমিটির মাধ্যমে বৃহত্তর আঙ্গিকে সুপারিশ নেওয়া। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তে আসতে পারত। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে তা গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয় হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়-এই সভায় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ইউজিসির চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু ইউজিসির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পরও তারা নিজ নিজ পদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করেন না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ভূমিকা সরকারি কর্মকর্তাদের মতই। অথচ, এ জাতীয় একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুগপোযোগী, কার্যকরী এবং টেকসই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সঙ্গত কারণেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের থাকার কথা নয়। তারা নিজ নিজ বিষয়ে জ্ঞানী এবং কর্মদক্ষ। কিন্তু পঠন-পাঠন ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত, অত্যন্ত উঁচুমানের বিষয়জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আধুনিক ও মৌলিক ধ্যানধারণা এবং গবেষণায় উচ্চপর্যায়ে সাফল্য ও অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা কতটুকু সফল হতে পারে সে বিষয়ে আমরা গভীরভাবে সন্দিহান।
বিবৃতিতে সহস্র শিক্ষক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নীতিমালা নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত নন এমন কর্মকর্তাদের শুধু রাখাই হয়নি উপরন্তু তাদের সংখ্যাই বেশি। আমাদের বিবেচনায় বিষয়টি দৃষ্টিকটুও বটে। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে উক্ত সভায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সম্প্রদায়ের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকাটা অত্যন্ত রহস্যজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রক্রিয়াগত ভুল বলে আমরা মনে করি, যা শিক্ষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অনাস্থার তৈরি করেছে। ’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একটি সাব-কমিটি গঠনের তাগিদও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিদানকারীরা হলেন দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শামীম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পাভেল মাহমুদ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নাকিব, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোর্তজা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মনিনুর রশীদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করীম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ শাকিল হাসমী, সহযোগী অধ্যাপক মো. তানজিল হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মো. মাসুদ রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক দিলীপ কুমার দাস, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর বাদশাহ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফজলুল হক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা জাহান সোহেলী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মোহাম্মদ আলমগীর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম জাহিদুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তনুশ্রী হালদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ময়নুল ইসলাম পল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মো. শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বিক্রম বিশ্বাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কুদরত ই জাহান, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাজমুল হক, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম জুয়েল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রিজাউল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আঞ্জুমান আর রজনী, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেহের নিগারসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/একে/এজেড