Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এনভিসি: আন্তর্জাতিক চাপ থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের অপ-কৌশল


৩ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৪৬

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: ফাইল ছবি

ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকটের মূলে নাগরিক অধিকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুতে গত ২৭ ও ২৮ জুলাই মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার সফরে রোহিঙ্গাদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) বিষয়ে প্রচারপত্র দিয়েছে। রোহিঙ্গারা এনভিসি’র প্রচারপত্র ছিড়ে ফেলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের এই সফরে নাগরিকত্ব অধিকারের বদলে এনভিসি কার্ডের ঘটনাকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞসহ সকলেই নাটক বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলছে, এটা হচ্ছে আর্ন্তজাতিক চাপ থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের একটি অপ-কৌশল এবং সময়ক্ষেপন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বলছে, নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয় রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমার সরকারের বিষয়, এর মধ্যে বাংলাদেশ ঢুকতে চায় না। বাংলাদেশ চায় স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এবার রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নাগরিকত্ব বিষয়ে আলাপ করতে পেরেছে। যা এর আগে কখনো তারা করতে পারেনি। আমি এই ঘটনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ব্রেক থ্র্রু অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা গো ধরেছে, নাগরিকত্ব না পেলে তারা মিয়ানমার ফিরে যাবে না। এই বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তারা আমাকে বলেছে, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য মিয়ানমারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। নাগরিকত্ব পেতে হলে রোহিঙ্গাদের ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী মিয়ানমার নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। মিয়ানমার যখন নাগরিকত্ব দিয়েছে, তখন রোহিঙ্গারা আবেদন করেনি, সরকারের আইন অমান্য করেছে। যদি আবেদন করত, তখন নাগরিকত্ব পেয়ে যেত।’

বিজ্ঞাপন

নাগরিকত্বের অগ্রগতির বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার আলাপ করেছে কিনা? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে নয়, মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এই আলাপ করেছে। আমরা তাদের এই নাগরিকত্বের ঝামেলার মধ্যে নাই। আমরা চাই, নিরাপদ এবং সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসন। নাগরিকত্ব ইস্যু মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গাদের। আমরা রোহিঙ্গাদের বলতে চাই যে, এটা তোমাদের সঙ্গে তোমাদের সরকার মিয়ানমারের বিষয়। তোমরা (রোহিঙ্গা) তোমাদের সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে যা করার করো, এর মধ্যে আমরা নাই।’

তুরস্কের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘এখনকার মিয়ানমার এক সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা যখন শাসন করতে আসল তখন তারা মিয়ানমারের সবগুলো রাষ্ট্রকে এক করে, এক রাষ্ট্র গঠন করে। তখন অনেকগুলো উপজাতি মিয়ানমারের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত হয়।’

ড. মাহাথির মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘তাই এখন রোহিঙ্গাসহ ওইসব উপজাতি ও গোষ্ঠীকে অবশ্যই নাগরিক স্বীকৃতি দিতে হবে অথবা তাদেরকে আগেরমতো আলাদা ভূ-খণ্ড দিতে হবে।’

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফরটি রাইটসের রাখাইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন কুয়েনলি বলেন, ‘কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদের দেওয়া এনভিসি কার্ড রোহিঙ্গারা ছিড়ে ফেলেছে। কেননা এই কার্ড প্রহসনমূলক একটি কর্মকাণ্ড।’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লরা হেইগ বলেন, ‘কক্সবাজারের শিবিরগুলো পরিদর্শনের সময় আসিয়ানের প্রতিনিধিদের কাছে রোহিঙ্গারা জানতে চেয়েছিল, “২০১২ সাল থেকে রাখাইনের বন্দি শিবিরে (ডিটেনশন ক্যাম্প) ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চলছে। এই বিষয়ে আসিয়ান কিছু করছে না কেন?” জবাবে আসিয়ানের প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের সব সমস্যা সমাধানের জন্য এখানে আসিনি’’।’

‘মিয়ানমারের এনভিসি কার্ডকে জেনোসাইড কার্ড’, উল্লেখ করে কানাডার নাগরিক এবং মানবাধিকার কর্মী ইয়াসমীন উল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কখনই জেনোসাইড কার্ড নেবে না। রাখাইনে জেনোসাইড পর্যটনের জন্য মিয়ানমার এই কার্ড দিচ্ছে। মিয়ানমারের এই অপকর্মের ব্যাপারে বিশ্ব চুপ কেন?’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের একজন দলনেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নাগরিক অধিকার ফিরে না পেলে কখনই মিয়ানমারে ফেরত যাবে না। এনভিসি কার্ড দিয়ে নাগরিক অধিকারের সমস্যা মিটবে না। এনভিসি কার্ড এর আগে বহুবার রোহিঙ্গারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এনভিসি কার্ডে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেয়া নাই এবং স্বাধীনভাবে চলার অনুমতি দেয় নাই।’

কক্সবাজারের একটি শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী রো সায়েদোল্লাহ বলেন, ‘গত সপ্তাহে মিয়ানমার প্রতিনিধিদের কক্সবাজার সফর ছিল একটি নতুন অপ-কৌশল। এই সফরের মধ্য দিয়ে তারা আর্ন্তজাতিক বিশ্বকে ফাঁকি দেওয়ার কৌশল করেছে। যাতে এই ইস্যুতে তাদের ওপর থেকে চাপ কমে। মূলত এভাবে তারা সময়ক্ষেপন করছে।’

ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এর গবেষক জেসিকা ওলনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য কিছুই করেনি। রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।’

এনভিসি মিয়ানমার রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর