মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ, ইয়াবার কারবারে রোহিঙ্গারা
৩ আগস্ট ২০১৯ ১৭:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘মিয়ানমারে থাকা এবং ওই দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিক মিলে গড়ে তুলেছে একটি ইয়াবা কারবারি চক্র। মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ইয়াবা সরবরাহ করে আবার ফেরত যাচ্ছে সেদেশে। আর বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্নস্থানে অবস্থান করে ইয়াবা তুলে দিচ্ছে এ দেশের বিক্রেতাদের কাছে। ক্যাম্পে থাকা কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককে তারা ব্যবহার করছে বহনকারী হিসেবে। এই চক্রের মূল বিনিয়োগকারী হিসেবে আছে বাংলাদেশি একজন।’
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার (৩ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৩ রোহিঙ্গা নাগরিককে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার তিনজন হলো- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. নিয়াজ উদ্দিন (২৫), কক্সবাজারের টেকপাড়া এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক মো. আইয়ূব আলী (৪২) এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক মো. সেলিম (৩২)।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে নগরীর ষোলশহর বিবিরহাট এলাকায় ইয়াবা হস্তান্তরের জন্য চারজন অপেক্ষা করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের টিম অভিযানে গেলে দু’জন পালিয়ে যায়। নিয়াজ ও আইয়ূবকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে ডিবি। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেলিমকে শনিবার ভোরে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুরের বাংলাবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তিনজনের এই চক্রে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো- মো. হানিফ (৩৮), কালা মোহাম্মদ (৩৮) ও মো. আলম (৫০)।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার নিয়াজের পরিবার এক দশকেরও বেশি সময় আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। বছরখানেক আগে নিয়াজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় চলে আসে এবং বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকে।
আইয়ূব আলীও পরিবার নিয়ে দুইবছর আগে মায়ানমার থেকে কক্সবাজারে আসে। প্রথমে অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকলেও পরে সে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করে।
সেলিমও দুই বছর আগে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আসে। মিয়ানমারে থাকার সময় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল সেলিম। কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল সেলিমের। দুই বছর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে প্রথমে কিছুদিন অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকলেও পরে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে এসে পাহাড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে।
হানিফ এখনও মিয়ানমারে বসবাস করে। তবে ইয়াবা ব্যবসার জন্য নিয়মিত কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে এবং চট্টগ্রামে প্রায়ই আসা যাওয়া করে। কালা মোহাম্মদও মিয়ানমারে বসবাস করে। নিয়মিত ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম শহরে আসে। নগরীর বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায় তার একটি ভাড়া বাসা আছে। সেখানে থেকে মূলত কালা মোহাম্মদ ইয়াবা সরবরাহ করে।
মো. আলম সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী। সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদে আলমের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিবি’র এই পরিদর্শক।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইলিয়াস খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলম এবং সেলিমের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক। সেলিম হচ্ছে আলমের এজেন্ট। আলম টাকা দেয়, সেলিম হানিফ ও কালা মোহাম্মদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চট্টগ্রাম নগরীতে নিয়ে আসে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিককে তারা বাহক হিসেবে ব্যবহার করে। নিয়াজ, আইয়ূব আলী বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।’
গ্রেফতার তিনজন ঢাকা, ঝিনাইদহ এবং মাগুরার বড় বিক্রেতাদের কাছে এই চক্রের সদস্যরা ইয়াবা সরবরাহ করার তথ্য দিয়েছে বলে জানান ইলিয়াস। গ্রেফতার তিনজনসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।