Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ, খামারি বেড়েছে হিলিতে


৪ আগস্ট ২০১৯ ০৯:০৪

দিনাজপুর: উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার একটি গ্রাম হিলি। সীমান্ত এলাকার এই গ্রামটিতে তেমন কোনো কলকারখানা নেই। কিন্তু রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলবন্দর। তাই কিছুদিন আগেও এখানকার মানুষদের অনেকটাই নির্ভর করতে হতো সীমান্ত অর্থনীতির ওপর। যদিও এই অর্থনীতির বেশিরভাগই পরিচালিত হতো অবৈধ পথে। বছর দুয়েক হলো সেই অবৈধ অর্থনীতিতে নজরদারি বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সীমান্ত এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওয়তায় আনায় অবৈধপথে ভারতীয় গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে গত বছর থেকে। ফলে এই এলাকার অনেক মানুষ স্ব-উদ্যোগী হয়ে গরু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে তারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিজ্ঞাপন

সীমান্ত ঘেঁষা হিলির বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখন দেখা মিলছে দেশি গরুর। দেশের বেশিরভাগ জায়গায় বিদেশি জাতের গরু হৃষ্টপুষ্ট করা হলেও এখানকার চিত্রটা ভিন্ন। খোলা মাঠে চড়ে বেড়ানো এসব গরু প্রকৃতির ঘাস-খড় খেয়েই বেড়ে উঠছে। এছাড়া গত বছর ভারত থেকে গরু না আসায় এখানকার অনেক খামারিই লাভবান হয়েছেন। আর এ কারণেই এবার হিলিতে খামারির সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এদিকে পুরুষ খামারিদের পাশাপাশি দেশি গরু পালন করে নিজেকে সাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নারীরাও। এই এলাকার বেশিরভাগ নারী বিভিন্ন এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নিজেরাই গড়েছেন দেশি গরুর খামার।

হিলির আলীহাট ইউনিয়নের গরু খামারি আশরাফ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আর আগেও গরু লালন-পালন করে তেমন কোনো লাভ করতে পারিনি। কারণ সে সময় ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসতো। এতে আমরা ক্ষতির মুখে পরতাম। বর্তমানে ভারত থেকে গরু না আসায় আমরা খামার করে লাভবান হচ্ছি।’

বোয়ালদার ইউনিয়নের খামারি আবেদ আলী বলেন, ‘ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আমরা দেশি গরু লালন-পালন করছি। দেশি গরুকে বাড়তি খাবার দিতে হয় না, খোলা মাঠে চড়িয়ে আমরা এসব গরু লালন-পালন করি। এতে স্বল্প পুজিঁতে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। সরকারের কাছে অনুরোধ, প্রতিবছরের মত এবারও যেন গরু আসা বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ায়। তবেই আমরা গত বছরের মত গরুর দাম পাব।’

হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের ছালেহা বেওয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়া পর ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে গরুর খামার করে সংসারকে সচল রেখেছি। গরুর দামও ভালো পাওয়া যায়। আমি সব দেশি গরু লালন-পালন করি। কারণ দেশি গরুকে খাবার কম খাওয়াতে হয় এবং তেমন রোগবালাই নেই। আর এতে খরচও হয় কম হয়। এ কারণে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমি ১০টি গরু লালন-পালন করছি। ভারত থেকে গরু যদি না আসে, তাহলে আমি লাভবান হব।’

বিজ্ঞাপন

কাদিপুরের গরু খামারি ফিরোজ কবির বলেন, ‘উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে আমাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত আমার খামারে প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে ডাক্তার এসে গরুকে দেখে যায়। তবে দেশি গরু হওয়ায় বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। ঈদের আগে বিভিন্ন জেলা থেকে গরুর ব্যাপারীরা এসে গ্রাম থেকে গরু কিনে নিয়ে যায়। এতে আমরা দামও ভালো পাই, ভোগান্তিতেও পড়তে হয় না।’

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সামাদ জানান, হিলিতে গতবার খামারের সংখ্য ছিল নয় হাজারের মতো। এবার তা বেড়ে ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এখানকার খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিনিয়ত আমাদের পশু অফিসের কর্মকর্তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশি গরুর মাংস ও দুধ সুস্বাদু হওয়ায় হিলিতে খামার দিন দিন বাড়ছে।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিছুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আগে থেকেই সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছি। সীমান্ত দিয়ে শুধু গরু নয়, অন্যকিছুও যেনো অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখছেন বিজিবির সদস্যরা। ’

গরু মোটাতাজাকরণ ভারত সীমান্ত সীমান্ত হিলিতে গরুর খামার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর