সড়কে মেরামত শেষ হচ্ছে না, উত্তরে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়বে
৪ আগস্ট ২০১৯ ২০:৪৭
ঢাকা: টানা বৃষ্টি ও দুই দফায় বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কের মেরামতের কাজ ঈদের আগে শেষ হচ্ছে না। ফলে আসছে কোরবানির ঈদে উত্তরাঞ্চলের পথে ঘরমুখী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উত্তরবঙ্গের নিয়মিত যাত্রী ও পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঈদযাত্রায় এমনিতেই এই অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তি পোহাতে। এই সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছোট-বড় খানাখন্দও আগে থেকেই ছিল। বন্যায় এর পরিমাণ বেড়েছে। ফলে আসছে ঈদুল আজহায় যাত্রীদের ভোগান্তি আগের চেয়ে না কমে বরং বাড়তেই পারে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের ১০টি জোনের হিসাব থেকে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ৬য়শ কিলোমিটার সড়ক বন্যা ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পূর্ব দিকে বন্যায় ভেঙে গেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে লোহাগড়া ও বান্দরবানের সড়কপথ। উত্তরাঞ্চলে সড়কের পাশাপাশি ৬০ কিলোমিটার রেলপথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রেলপথ মেরামতের কাজ এখনো চলছে।
জানা গেছে, বন্যার পর আটটি রুটে বিকল্প পথে চলছে ট্রেন। এই অবস্থায় আগামী ৬ আগস্টের পর থেকে শুরু হচ্ছে রাজধানী থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা। এই যাত্রায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা সড়ক ও রেল— উভয় পথেই দুভোর্গের শিকার হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
যদিও রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জোহা আশা করছেন, ঈদের আগেই রেল রুটের মেরামত কাজ শেষ হবে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্যার পরপরই রেলপথ আবার ঠিক করার কাজ শুরু হয়েছে। কিছু স্থানে এখনো পানি থাকায় কাজ শুরু হয়নি। তবে ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত রুট মেরামত শেষ করে সচল করা হবে।’
এদিকে, বিধ্বস্ত সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার কাজ ঈদের আগেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরাঞ্চরের বেশকিছু স্থানেই নির্ধারিত সময়ে সংস্কার কাজ শেষ হবে না।
এই এলাকায় চলাচলকারী বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পর নলকাব্রিজ, সিরাজগঞ্জ মোড়সহ বেশকিছু এলাকায় একদিকে রাস্তা খারাপ থাকায় অন্যদিকে যানজট লেগে থাকছে সবসময়। এর মধ্যেই চলছে সড়ক সংস্কারের কাজ।
সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অধিদফতর ১০টি সড়ক জোনের অধীন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে উত্তরের আটটি রুটে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি রয়েই গেছে। কারণ সেখানে বিকল্প রুটে ট্রেন চলছে।
সওজ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে বন্যায় ও বৃষ্টিতে ছয়শ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি-বান্দরবান আঞ্চলিক মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক, সিলেটের সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, নেয়ামতপুর-তাহিরপুর, কচিরঘাটি-বিশ্বম্ভরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। সিলেট-মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক মহাসড়ক, সিলেট বিয়ানীবাজার সড়ক, শেরপুর-জামালপুর মহাসড়ক, সিলেট-গোয়াইনঘাট মহাসড়ক, শ্যামপুর-দুর্গাপুর মহাসড়ক, রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক ও টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়ক। কুড়িগ্রামে ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক স্থানে স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাইবান্ধা শহরের সড়কগুলোও পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সওজের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয় থেকে জানানো হয়, সবগুলো সড়ক মেরামতে কাজ শুরু হয়েছে। প্রকৌশলীরা মাঠে রয়েছেন। ঈদের আগে শতভাগ না হলেও ৮০ শতাংশ মেরামত শেষ হবে।
এদিকে রেলপথের ৬০ কিলোমিটার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখনও আটটি ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত লাইন ছেড়ে বিকল্প রুটে চলছে। এর মধ্যে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশন ও জামালপুর-তারাকান্দি সেকশনের সরিষাবাড়ী-বয়ড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেলপথ পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি পুরোপুরি সরে না যাওয়ায় মেরামত কাজ শেষ হচ্ছে না।
উত্তরের বেশকিছু রুটে চলাচল করে শ্যামলী পরিবহনের বাস। বাস মালিক শুভঙ্কর ঘোষ জানান, বঙ্গবন্ধুর সেতুর পর থেকে নলকাব্রিজ থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ মোড় পর্যন্ত এলাকায় এখনো কাজ চলছে। যে কারণে ঈদে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। বড় যানজটও তৈরি হয়ে যেতে পারে এ এলাকায়।
বাসমালিকরা জানান, কাচিকাঁটা এলাকাতেও সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। সে কাজও ঈদের আগে শেষ হবে না। রাজশাহী যাওয়ার আগে পুটিয়া এলাকার সড়কপথের অবস্থাও সম্পূর্ণ উপযোগী নয়। ফলে উত্তরবঙ্গের পথে কোনো রুটেই যাত্রীরা স্বস্তির যাত্রা পাবেন না বলে মনে করছেন তারা।
ছবি: জয়পুরহাটের সড়কের বেহাল অবস্থা; উত্তরবঙ্গের অনেক সড়কের অবস্থাই এমন
ঈদযাত্রা উত্তরবঙ্গ সড়ক মেরামত সড়ক সংস্কার সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার