Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় সম্মেলনের আগেই সহযোগী সম্মেলন চায় আ.লীগ


৪ আগস্ট ২০১৯ ২৩:১৬

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই বাকি সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অক্টোবরের মধ্যেই শেষ করতে চান তারা। দলের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখের চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসে দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চলছে কয়েকমাস ধরেই। দেশব্যাপী এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্মেলনের তারিখ কিছুটা পিছিয়ে আয়োজনের আলোচনাও চলছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিজেদের সম্মেলন শেষ করার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে দল থেকে। গত ১৪ মে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথসভা থেকেও এ বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয় সহযোগী সংগঠনগুলোকে। তবে দল বা সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের মতো চূড়ান্ত দলীয় সিদ্ধান্তগুলো শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে ফেরার পরই চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্রগুলো।

এর আগে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর পরই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। ওই সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল, ছয় মাসের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হবে। পরে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত করা হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ১৯ মার্চ তাঁতী লীগ ও ২৯ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোরও সম্মেলনের করার পরিকল্পনা ছিল। তবে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাকি সংগঠনগুলোর সম্মেলন আটকে যায়।

বিজ্ঞাপন

এই চারটি সংগঠনের বাইরেও আওয়ামী লীগের স্বীকৃত সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন পাঁচটি। এর কোনোটিরই মেয়াদ নেই। যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন হারুন অর রশিদ। ওই বছরেরই ১১ জুলাই মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই হিসাবে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ এসব কমিটি টিকে আছে সাত বছর ধরে।

একই অবস্থা সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগেরও। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে কৃষক লীগের কমিটি ঘোষণা হয়। একই অবস্থা জাতীয় শ্রমিক লীগেরও। সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক লীগের কমিটির মেয়াদও নির্ধারিত সময়ের কয়েকবছর পেরিয়ে গেছে। তবে ২৯ এপ্রিল ২০১৭ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সংগঠনটি পরে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ওই বছরের ২১ মে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এ বছর। বাকি পাঁচ সংগঠনেরই কেন্দ্রীয় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মূল দলের জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। এতে করে নেতৃত্বে আসা পাইপলাইনে থাকা নেতারা ‘নেতৃত্ব জ্যামে’ আটকে পড়েছেন বলে মন্তব্য দলের শীর্ষ অনেক নেতাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলে এই সময়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এবার দলকে তূণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর নির্দশনা দিয়েছেন। আমাদের ২১তম জাতীয় সম্মেলন সামনে। এর আগেই বাকি মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোও তাদের নিজ নিজ সম্মেলনের জন্য সারাদেশে বিভিন্ন জেলা সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করার কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাকি সংগঠনগুলোকে সম্মেলন করার ক্ষেত্রে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। নেত্রী চোখের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরলে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবেন।’

আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন এর আগেই আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না— জানতে চাইলে নানক বলেন, নেত্রী সহযোগী সংগঠনগুলোরও সাংগঠনিক নেত্রী। উনিই সংগঠনগুলোকে সম্মেলনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে হবে কি না, এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ মহ বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দলের সম্মেলনের আগেই এগুলো শেষ করার চেষ্টা করা হবে।’ দলের সম্মেলন অক্টোবর থেকে পিছিয়ে গেলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অক্টোবরের আগেই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

সংগঠনের সম্মেলন করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না— জানতে চাইলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার সারাবাংলাকে বলেন, দল থেকে সম্মেলন করার নির্দেশনা রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো দেওয়া হয়নি। যেহেতু আমাদের সংগঠনেরও সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাই আমরা চাই তার উপস্থিতিতেই তিনি প্রধান অতিথি থাকবেন। ফলে তিনি যখন সময় দেবেন, তখনই সম্মেলন হবে।

আবু কাওসার আরও বলেন, সম্মেলন আয়োজনে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন সভাপতি (শেখ হাসিনা) সময় দিলেই আমরা সে অনুযায়ী সম্মেলন করব।

আওয়ামী লীগ জাতীয় সম্মেলন সহযোগী সংগঠন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর