ইজারা সম্পন্ন, ঢাকায় বসবে ২৩টি অস্থায়ী পশুরহাট
৫ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৪৮
ঢাকা: বছর ঘুরে ফের আসছে ঈদুল আজহা। এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও বসবে কোরবানির পশুরহাট। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার ২৩টি অস্থায়ী হাটে পশু কেনাবেচা চলবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবে ৯টি পশুরহাট। সেইসঙ্গে গাবতলীর স্থায়ী পশুরহাটেও চলবে কোরবানির পশু বেচাকেনা। ৭ আগস্ট থেকে হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুরহাট বসাতে এরই মধ্যে ইজারা সম্পন্ন করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এবার ইজারার রাজস্ব আদায়ে এগিয়ে আছে ডিএনসিসি। সংস্থাটির নয়টি হাট থেকে দরপত্রের সর্বোচ্চ মূল্য পেয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৬ টাকা। আর ডিএসসিসির ১৪টির মধ্যে ১২টি হাটের দরপত্রে সর্বোচ্চ মূল্য পেয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৪১ টাকা। ডিএসসিসির দুটি হাটের মিলেনি কাঙ্ক্ষিত দর। এবার সংস্থাটির ১৪টি হাটের সর্বনিম্ন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ হাজার ৭০৪ টাকা, যা গত বছরের ১৩টি হাটের দরপত্রের তুলনায় প্রায় ৪ কোটি টাকা কম।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে পশুরহাট বসাতে হাটের সংখ্যা নির্ধারণ, দরপত্র মূল্যায়ন ও ইজারাদার বাছাই হয়েছে। গত ১৬ জুন ১০টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রদানে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৩ জুন দরপত্রের বিপরীতে বেশি দাম আহ্বানকারী ব্যবসায়ীদের হাট ব্যবস্থাপনার ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ১০টি হাটের মধ্যে ডিএনসিসির ইজারাকৃত একটি হাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। কারণ এখনও ওই হাটের জায়গা নিয়ে জটিলতা নিরসন হয়নি। এতে সংস্থাটি রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, কোরবানির পশু কেনাবেচায় দুর্ভোগ এড়াতে ডিএসসিসি মোট ১৪টি হাটের দরপত্র আহ্বান করেছিল। নির্ধারিত সময়ে ১২টি হাটের ডিএসসিসির আহ্বানকৃত দরের অধিমূল্য পাওয়া গেছে। তবে দুটি হাটের কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসি এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাটগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুরের মৈত্রী সংঘ মাঠ, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, শ্যামপুর বালুর মাঠ, মেরাদিয়া বাজার, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড শামসাবাদ মাঠ, গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকা, দনিয়া মাঠ, ধূপখোলা মাঠ, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউয়ারটেক মাঠ, আফতাব নগর ইস্টার্ন হাউজিং এবং আমুলিয়া মডেল টাউন।
ডিএসসিসির ১২টি হাটের মধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে উত্তর শাহজাহান পুরের মৈত্রী সংঘ মাঠ পেয়েছেন এ এস এম এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মো. আব্দুল লতিফ, ৯৮ লাখ টাকা দরে জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ পেয়েছেন মো. দিল জাহান ভুঁইয়া, সর্বোচ্চ দর ১২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ পেয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সহ-সভাপতি হাজী শফি মাহমুদ। এছাড়া সর্বোচ্চ দর ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কামরাঙ্গীরচর চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় এলাকা ইজারা পেয়েছেন মো. আবুল হোসেন সরকার, ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকায় পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকা ইজারা পেয়েছেন মো. মঈন উদ্দিন চিশতি, সর্বোচ্চ দর ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে মেরাদিয়া বাজার পেয়েছেন হাজী মো. শাহ আলম, সর্বোচ্চ দর ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকা দিয়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড শামসাবাদ মাঠ পেয়েছেন মুরাদ হাসান।
এদিকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ১৮১ টাকা দিয়ে গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকা পেয়েছেন মো. জাকির হোসেন। সর্বোচ্চ দর ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় দনিয়া মাঠ পেয়েছেন মো. মোশারফ হোসেন, ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ধূপখোলা মাঠ পেয়েছেন মো. শামচ্ছুজোহা, ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় কাউয়ারটেক মাঠ ইজারা পেয়েছেন ফরহাদ ভূঁইয়া (বাবু) এবং ৭০ লাখ টাকায় আফতাব নগর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা ইজারা পেয়েছেন নবী হোসেন।
তবে শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং আমুলিয়া মডেল টাউনে সর্বনিম্ন মূল্যও না পাওয়া সেগুলো স্থগিত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দরপত্র না পাওয়া গেলে হয়তো ডিএসসিসি নিজেরাই হাসিল আদায় করবে। মাঠ দুটির যথাক্রমে দরপত্রের মূল্য ছিল ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৮ টাকা এবং ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এ টাকার বিপরীতে মাঠ দুটির যথাক্রমে ৫০ লাখ ১১ হাজার ১০১ টাকা এবং ৬ লাখ টাকা ইজারা দর পাওয়া গেছে। যা সর্বনিম্ন দরের চেয়েও কম।
এদিকে ডিএনসিসি এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী পশুরহাট ছাড়া অস্থায়ীভাবে ৯টি পশুরহাট বসবে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো- উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের এক নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশে ও দুই নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশের ফাঁকা জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-৬ এর (ইস্টার্ন হাউসিং) খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুরহাট, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তরপাশের সেতু প্রপার্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গার অস্থায়ী পশুরহাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ, বাড্ডার ইস্টার্ন হাউসিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, আফতাবনগর সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা।
ডিএনসিসির অস্থায়ী ৯টি পশুরহাটের মধ্যে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন মো. নুর হোসেন, ৩ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার টাকায় মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) এলাকা ইজারা পেয়েছেন মো. শাহ আলম হোসেন ১ কোটি ২৯ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৬ টাকায় মিরপুর সেকশন-৬ এর খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন আসরাফ উদ্দিন, ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট ইজারা পেয়েছেন মো. ইকবাল হোসেন খন্দকার, ২৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তরপাশের সেতু প্রপার্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন মো. আব্দুল হালিম, ৪৭ লাখ টাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ ইজারা পেয়েছেন মো. জামাল উদ্দিন।
এছাড়া ৯৬ লাখ টাকায় বাড্ডার ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন মো. নবী হোসেন রনি, ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন হীরা আহমেদ রতন এবং ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ভাষানটেকের খালি জায়গা ইজারা পেয়েছেন হামিদ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী হামিদা সুলতানা। ৩০০ ফিট সড়কের খালি জায়গাটি ২ কোটি ১৫ লাখ ৫০ টাকায় নুর হোসেন নামে এক ব্যক্তি ইজারা পেলেও জায়গাটির মালিকানায় বসুন্ধরা গ্রুপ এবং তারা জায়গাটি না ছাড়ায় এবার সেখানে কোনো হাট বসবে না। তবে ইজারা দেওয়া হাটগুলোর সর্বনিম্ন দরপত্র কত আহ্বান করা হয়েছিল সেটি জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাটগুলো কত মূল্যে ইজারার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল সেটি আমার জানা নেই। ইজারা প্রক্রিয়ার সময় প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা দায়িত্ব ছিলেন। বর্তমানে তিনি হজ্বে যাওয়ায় আমি দায়িত্ব পালন করছি। ’
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দরপত্রে ১৪টির মধ্যে ১২টি হাটের কাঙ্ক্ষিত সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে। সেগুলো ইজারা দেওয়া হয়ে গেছে। বাকি দুটি হাটের কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত তারা নেবেন। ’
ইজারাদার না পাওয়া গেলে শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন নিজেরাই হাসিল আদায় করতে পারে বলেও জানান তিনি।