‘জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের কর্মস্থান এখন কবরস্থান’
৬ আগস্ট ২০১৯ ২১:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাষ্ট্র এবং মালিকদের উদাসীনতার কারণে জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের কর্মস্থান এখন কবরস্থানে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের শ্রমিক নেতারা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম’ আয়োজিত জাহাজ ভাঙা কারখানায় অব্যাহতভাবে শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশে এই মন্তব্য করেন নেতারা।
শ্রমিক নেতারা মানবন্ধনে বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে গত ৬ বছরে জাহাজ ভাঙা কারখানায় ৮৯ জন শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন। গত ৩১ জুলাই সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়িতে ম্যাক করপোরেশনের একটি ইয়ার্ডে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৪ জন। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই মারা গেছেন ১২ জন শ্রমিক।’
এসব মৃত্যুর জন্য কারখানা মালিকদের উদাসীনতা দায়ী মন্তব্য করে শ্রমিকরা আরও বলেন, ‘কারখানার মালিকরা কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না। তারাই শ্রমিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, জাহাজ কাটার আগে বর্জ্য, বিষাক্ত গ্যাস এবং বিস্ফোরকমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মালিকরা যথাযথভাবে সেটা অনুসরণ করেন না। তাছাড়া বড় জাহাজ কাটার জন্য যে ধরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি উন্নত বিশ্বে ব্যবহার করা হয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ ইয়ার্ডে তা নেই। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা কাজ করছেন।’
শিপইয়ার্ড শ্রমিকদের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতায় ক্ষোভ জানিয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘জাহাজ ভাঙা মালিকরা ব্যবসা এবং মুনাফা বোঝেন। আর সরকার বোঝে মালিকের স্বার্থ। সরকার-মালিক কেউই শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বোঝে না। এই কারণে শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ডগুলো। রাষ্ট্র এবং মালিকদের এমন নির্লিপ্ততা আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’
সংগঠনের আহ্বায়ক তপন দত্তের সভাপতিত্বে ও শ্রমিক নেতা ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মু. শফর আলী, শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয় শ্রমিক লীগের শফি বাঙ্গালি। মানববন্ধন শেষে শ্রমিকরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
কর্মস্থান এখন কবরস্থান জাহাজ ভাঙা শিপ ইয়ার্ড শ্রমিকদের মৃত্যু