সংকট নেই লবণের, বাজার এখনো স্থিতিশীল
৭ আগস্ট ২০১৯ ১৯:৩১
ঢাকা: কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে দেশে পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন লবণ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত লবণের দামও রয়েছে স্থিতিশীল। বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণ (৭৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ বছর কোনোভাবেই লবণের দাম বাড়বে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি। তবে শেষ মুহূর্তে কৃত্রিম সংকটের অজুহাতে এবার যেন লবণের দাম আর না বাড়ে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখার আহ্বান জানিয়েছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, কোরবানির জন্য এক লাখ টন লবণের চহিদা রয়েছে। মিল ও বাজারে সেই লবণের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। কোরবানিকে সামনে রেখে লবণের সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। লবণের বাজার বরং এখন নিম্নগতির দিকে। গত কয়েক মাস ধরেই লবণের দাম কমেছে। সামনেও তেমন বাড়বে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে নুরুল কবির বলেন, মিল গেটে প্রতি বস্তা লবণের দাম এখন ৬০০ টাকা। সারাদেশে এর দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে আনা লবণ মজুত হচ্ছে চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, লবণের দাম এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) লবণ। এখন পর্যন্ত এ বছর লবণের দাম তেমন বাড়েনি।
হাজী দেলোয়ার হোসেন জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (৮ আগস্ট) মধ্যে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে তাদের সব টাকা পেয়ে যাওয়ার কথা। তবে বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত প্রায় দেড়শ ট্যানারির মধ্যে মাত্র দুইটি ট্যানারির কাছ থেকে পুরো টাকা বুঝে পেয়েছেন তারা। লবণের দাম এ বছর সত্যিকার অর্থেই স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা বুঝতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান দেলোয়ার।
আর বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত লবণের দাম ঠিক আছে। কোথাও দাম বেড়েছে— এমন খবর পাওয়া যায়নি। আর দেশেও পর্যাপ্ত লবণের জোগান রয়েছে বলে জেনেছি।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন। বছরটিতে অন্তত ৮ লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। তবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে সাধারণত লবণের চাহিদা থাকে এক লাখ টনের মতো। বর্তমানে মিল গেটে যে পরিমাণ লবণ আছে, তা এই চাহিদার চেয়েও বেশি।
লবণ মিল মালিক সমিতি জানায়, কোরবানির জন্য লবণের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। লবণ রয়েছে সব মিলেই। আর বর্তমানে লবণের দামও কমছে।
সমিতি আরও জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই বিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে লবণ সংকট নেই। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই লবণ আমদানি করতে হচ্ছে। ঘাটতি নেই জানানো হলেও ২০১৬ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণ আমদানি করতে হয়েছিল। ২০১৭ সালে আমদানি করতে হয়েছিল ৫ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০১৮ সালে ৯ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করা হয়েছে বলে তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলছে, প্রতিটি বড় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১২ কেজি, মাঝারি চামড়ায় ৭ থেকে ৮ কেজি ও ছোট চামড়ায় ৫ থেকে ৬ কেজি লবণ লাগে। কোরবানিতে এ বছর ১ লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এ বছর ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। যেখানে গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখের মতো পশু। দেশে কোরবানি হওয়া সব চামড়াই সংগ্রহ করে থাকেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।
ছবি: শ্যামল নন্দী
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে লবণ চামড়া ব্যবসায়ী লবণ লবণ ব্যবসায়ী লবণ সংকট লবণের দাম লবণের সংকট