Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হচ্ছে সোনাহাট–কুড়িগ্রাম সড়ক


৮ আগস্ট ২০১৯ ০৮:০০

ফাইল ছবি

ঢাকা: সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত সড়ক জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক অবকাঠমো এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রফতানিও বাড়বে।

এজন্য ‘কুড়িগ্রাম (দাসেরহাট)–নাগেশ্বরী–ভুরুঙ্গামারী–সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আসলাম সওদাগর সারাবাংলাকে বলেন, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার উন্নয়নে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর বিকল্প নেই। সে চিন্তা থেকেই সরকার সোনাহাট স্থলবন্দর স্থাপন করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এই এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। কেননা এরই মধ্যে দুধকুমর নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই সড়কটি ফুলবাড়ী উপজেলার মধ্য দিয়ে ধরলা সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত করা হলে পাশের লালমনিরহাট জেলা এবং রংপুর বিভাগের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৬ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করার জন্য প্রকল্পটি প্রস্তুত হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

সড়ক পরিবহন পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮তম স্থলবন্দর হিসাবে সোনাহাট স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোনাহাট স্থলবন্দরটি কুড়িগ্রাম শহর থেকে ৫০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থলবন্দরটি কুড়িগ্রাম সদরের সঙ্গে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত। সড়কটি কোথাও ১২ ফুট, কোথাও ১৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। এটি এইচবিবি হিসেবে নির্মিত হয়েছিল, যা পরে সার্ফেসিং করা হয়, ফলে রাস্তাটি ভারী যান চলাচলের জন্য অনুপযোগী। বর্তমানে উল্লিখিত স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে কয়লা এবং পাথর আমদানি হয়ে থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম উত্তরোত্তর বাড়ছে।

এদিকে, একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সোনাহাট স্টিল সেতুটি আরসিসি সেতু হিসেবে নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ সড়কটি দিয়ে দৈনিক ১২ শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করবে। এর মধ্যে সড়কটিকে জেলা মহাসড়ক থেকে জাতীয় মহাসড়ক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া এ সড়কের অ্যালাইনমেন্ট বরাবর দুধকুমর নদীর ওপর ৬৪৫ দশমিক ১৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ এবং সোনাহাট সেতু অ্যাপ্রোচ থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করতে আলাদা দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এই সড়কটি ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ এবং উভয় পাশে ১ দশমিক ৫ মিটার হার্ড শোল্ডারসহ উন্নীত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৭৪৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

এরপর প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পটির যৌক্তিকতা নিরূপণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধানের (সড়ক পরিবহন উইং) নেতৃত্বে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং আইএমইডি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি প্রতিবেদন পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী কমিটি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর প্রকল্পটির ওপর ফের চলতি বছরের ২৬ মে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ডিপিপি পুর্নগঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৮৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ১৯ দশমিক ১৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৯ দশমিক ৭৫ লাখ ঘনমিটার মাটি ফেলার কাজ, এক দশমিক ৫৮ লাখ ঘনমিটার বালু দিয়ে ভরাট, ৭৫ মিটার সেতু নির্মাণ, ৯৩ দশমিক ১০ মিটার কালর্ভাট নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার বনায়ন, তিনটি রোড ইন্টারসেকশন, ৪৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার হার্ড শোল্ডার, দুই কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট, এক হাজার মিটার ব্রিক টো-ওয়াল, জেনারেল সাইট ফ্যাসিলিটিজ, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ট্রাফিক সাইন পোস্ট, কিলোমিটার পোস্ট, রিফ্লেকটরসহ গাইড পোস্ট, দিকনির্দেশক সাইনসহ আনুষঙ্গিক কাজ।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামে বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী- ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীত হবে। এতে সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হবে এবং প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক সোনাহাট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর