ঢাকা: ঈদযাত্রার মূল স্রোত শুরু হয়েছে। গ্রামের পথে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী অনেকেই ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে অফিসে হাজিরা দিয়েই বেড়িয়ে পড়েছেন বাড়ির পথে। সব মিলিয়ে রাজধানীর জনস্রোত এখন গাবতলী, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল; সদরঘাট নদীবন্দর আর কমলাপুর রেলস্টেশনে। এর মধ্যে শুরুতেই শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে রেলে ঈদযাত্রায়। ঢাকা থেকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে রওনা দিতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পর। নীলফামারীগামী নীলসাগর, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের কোনোটিই ছাড়তে পারেনি নির্ধারিত সময়ে।
ট্রেনগুলো সময়মতো ছাড়তে না পারায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই যাত্রীরা চলে এসেছিলেন কমলাপুর রেল স্টেশনে। তিন-চার ঘণ্টাতেও ট্রেন না ছেড়ে যাওয়ায় সবগুলো ট্রেনের যাত্রীতে স্টেশন লোকে লোকারণ্য।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৫৫টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে ছেড়ে যাবে বৃহস্পতিবার। এসব ট্রেনে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকায় যাত্রী ওঠানামায় সময় নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ঈদযাত্রায় বেশি মানুষের চাপ মোকাবিলা করতে হয়। যাত্রী বেশি হওয়ায় ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে থামলে যাত্রী ওঠানামায় আগের চেয়ে সময় অনেক বেশি লাগছে। ফলে ট্রেনগুলো ঢাকায় আসছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পর। ফলে ঢাকা থেকে ট্রেনগুলো ছেড়ে যেতেও দেরি হচ্ছে। ঈদের বিশেষ তিনটি ট্রেন এদিন থেকে যাত্রী টানা শুরু করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, সদরঘাট থেকেও ঈদের বিশেষ অতিরিক্ত লঞ্চযাত্রা শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা নৌপথে স্বাভাবিক সময়ে ২১টি বেসরকারি লঞ্চ চলাচল করে। ঈদ সামনে রেখে এখন ট্রিপের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০টিরও বেশি। আর ঈদযাত্রায় শুধু এই রুটে দুই শতাধিক নৌযান চলাচল করবে। ঈদের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তি লঞ্চের যাত্রীসেবা চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে লঞ্চ মালিকদের আশঙ্কা, প্রবল স্রোতের টানে লঞ্চ নদীতে আটকা পড়ে কাৎ হয়ে যেতে পারে। এসব মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রস্তুতি নেই।
অন্যদিকে সড়ক পথেও ঈদযাত্রার মূলস্রোত শুরু হয়েছে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়দাবাদ টার্মিনাল থেকে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে ঈদযাত্রার বিশেষ বাসগুলো। এখন পর্যন্ত বাসের শিডিউল বিপর্যয়ের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের ৮০০ কিলোমিটারের অনেকাংশেরই সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় এবং পশুবাহী ট্রাকের বিশৃঙ্খল চলাচলের কারণে বিভিন্ন মহাসড়ক ও রাজধানীর সড়কগুলোর স্থানে স্থানে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যানজট শুরু হলে বেশিরভাগ রুটেই বাসগুলোও শিডিউল মেনে চলতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।