বগুড়ায় পশুর হাটে ইচ্ছামতো খাজনা আদায়
৮ আগস্ট ২০১৯ ২০:৫০
বগুড়া: বগুড়ায় কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে খাজনা বা হাসিল আদায়ে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। হাটের ইজারাদাররা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকেই হাসিল আদায় করছেন। এমনটি হাটে টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায়ের তালিকাও।
জেলার শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী, সুলতানগঞ্জ, ডোমনপুকুর, রাণীরহাট, শেরপুর উপজেলার শেরপুর হাট, মীর্জাপুরহাট, ভবানীপুরহাট, ছোনকাহাট, শিবগঞ্জের মহাস্থান হাট, আদমদীঘি উপজেলার আদদীঘি হাট ও দুপচাঁচিয়ার ধাপ সুলতান হাট সহ অন্যান্য হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এবার হাটে প্রতি গরুর জন্য ৪০০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১০০ টাকা হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই খাজনাও দেবেন কেবল ক্রেতা। বিক্রেতা কোনো হাসিল দেবেন না।
কিন্তু বগুড়ার হাটগুলোতে ইজারাদারেরা প্রতিটি গরু ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ক্রেতার কাছ থেকে ৩০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করছেন। পশুরহাটে খাজনা আদায়ের তালিকা টাঙানোর বিষয়ে ইজারাদারদের প্রতি সরকারিভাবে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। ফলে তারা শুধু পশুর হাট থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা ও পশু ব্যবসায়ীরা।
কথা হয় বগুড়ার শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ী হাটের গরু বিক্রেতা কেরামত আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, দারিদ্রতার মধ্যে বহু কষ্টে একটি ষাঁড় গরু লালন-পালন করেছেন। সেটি বিক্রি করে তিনি কিস্তি পরিশোধ, দেনা পরিশোধ, ভাঙ্গা ঘর মেরামত করে ঈদের কেনাকাটা করবেন। ষাঁড়টি মঙ্গলবার দুবলাগাড়ী হাটে আনেন। সেটি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করার সময় মূল্যরশিদে তার কাছ থেকে ১০০ টাকা ও ক্রেতা সহিদুলের কাছ থেকে ৫০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।
কেরামত আলী আক্ষেপ করে বলেন এতো কষ্টে লালন করা গরু ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করার পর সেখান থেকেও যদি ইচ্ছামতো টাকা কেটে নেয়, তাহলে কিভাবে চলে?
এভাবে টাকা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে দুবলাগাড়ী হাটের ইজারাদারের নিয়োগ করা কর্মী সুমন জানান, ‘এতো টাকায় একটা গরু কিনতে পারলে ৫/৬শ টাকা খাজনা দেওয়া তেমন কিছু না। এ টাকা দিতেই হবে।’
একই চিত্র দেখা গেছে, বনানী সুলতানগঞ্জের কোরবানীর পশুর হাট, রাণীর হাট, ডোমনপুকুর গরুর হাটগুলোতে। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত মনগড়াভাবে খাজনার নাম দিয়ে অর্থ লুটে নিচ্ছে ইজারাদাররা।
প্রতিটি পশুরহাট থেকে কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ গরু কেনা-বেচা হয়। আর ছাগল বিক্রি হয় দেড় শতাধিক। সেক্ষেত্রে একটি গরুর জন্য ৬০০ টাকা নেয়া হলে ২০০ গরুর খাজনা হয় ১ লাখ ২০হাজার টাকা। আর প্রতিটি ছাগলের জন্য ৩৫০টাকা খাজনা নেয়া হলে ১৫০টি ছাগলের খাজনা হয় ৫২ হাজার টাকারও বেশী। সব মিলিয়ে দেখাযায় প্রতিদিন পশুরহাট থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা খাজনার নাম দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এসব হাটগুলোতে যারা পশু বিক্রি করতে আসেন তারা বেশিরভাগই আশপাশের গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষক বা ছোট ব্যবসায়ী। তাই সহজে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তারা। তাদের অভিযোগ, ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এভাবে টাকা আদায় করাকে তারা পরোক্ষভাবে চাঁদাবাজি বলেও মনে করছেন।
এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনে অভিযোগ করা হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নাওয়া হয় না বলেও এসব ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন জানান, পশুরহাটে খাজনা আদায়ের জন্য ইজারাদারদের নির্ধারিত তালিকা টাঙিয়ে সে মোতাবেক খাজনা আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি এর কোন ব্যত্যয় ঘটে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।