ফের পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চট্টগ্রাম ওয়াসার
৮ আগস্ট ২০১৯ ১৮:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় আবারও আবাসিক-অনাবাসিক খাতে পানির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আবাসিক খাতে ৬ টাকা ৮ পয়সা এবং অনাবাসিক খাতে ১৭ টাকা ৪৪ পয়সা করে প্রতি ইউনিটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার (০৯ আগস্ট) ৫২ তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। বোর্ড সভায় অনুমোদন হলে প্রস্তাব যাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দাম বাড়বে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিব চট্টগ্রামে এসে ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচ ও বিক্রির আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘাটতি পূরণের কথা বলেছিলেন। মন্ত্রী-সচিব যেহেতু বলেছেন, সেটা আমাদের কাছে নির্দেশ। এর আলোকে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করতে বলেছিলেন। আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি। সেটা বোর্ড সভায় উঠবে। অনুমোদন দেওয়া, না দেওয়া সেটা বোর্ডের বিষয়। এটা নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই।’
গত ২৮ জুন চট্টগ্রাম ওয়াসার এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ওয়াসার পানির কর যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এরপর ৩০ জুন চট্টগ্রাম ওয়াসা উৎপাদন খরচ, পানির কর ও ঘাটতির হিসাব তৈরি করে। গত ৪ আগস্ট দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ওয়াসার হিসাবে প্রতি ঘনমিটার পানির উৎপাদন খরচ ঋণের সুদ ছাড়া প্রায় ১৬ টাকা। আর সুদাসলসহ খরচ প্রায় ৩০ টাকা।
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার সংযোগ সংখ্যা ৬৭ হাজার ২৭টি। এর মধ্যে আবাসিক খাতে ৬১ হাজার ৭৫৫টি এবং অনাবাসিক খাতে ৫ হাজার ২৭২টি। আবাসিক খাতে পানি সরবরাহ হয় মোট উৎপাদনের ৮৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং অনাবাসিক খাতে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আবাসিক খাতে ৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৬০ লিটার এবং অনাবাসিক খাতে ৯ লাখ ৮ হাজার ১৯০ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যা থেকে ওয়াসা বিল পায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় আবাসিক-অনাবাসিক খাতে পানির দাম প্রতি ইউনিটে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়, যা মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। আবাসিক খাতে বর্তমানে পানির দাম প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং অনাবাসিক খাতে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা।
পাঁচ শতাংশ দাম বাড়ানোর পরও ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের হিসেবে প্রতি ইউনিটে (হাজার লিটার) ঘাটতি ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। কারণ প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ গড় হিসেবে ১৫ টাকা ৬১ পয়সা আর বিক্রয়মূল্য গড় হিসেবে ১১ টাকা ৯৬ পয়সা। ওয়াসা প্রতি হাজার লিটারে গড়ে ঘাটতি দেখিয়েছে ৩ টাকা ৬৫ পয়সা।
এই অবস্থায় পানি উৎপাদন, ব্যয় ও অভিকরের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন বিধিমালা, ২০১১ এর ৪ (৩) অনুযায়ী পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আবাসিক খাতে প্রতি হাজার লিটার ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা এবং অনাবাসিক খাতে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাঁচ মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাবকে ‘অগ্রণযোগ্য এবং দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াসার সরবরহ করা পানির ৮৮ শতাংশই আবাসিক গ্রাহক। আর ওয়াসা দিনে চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারে। এজন্য নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানির জন্য এখনও হাহাকার। চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্পের কথা বলে নগরবাসীকে বারবার বিভ্রান্ত করছে এবং দাম বাড়ানোর কথা বলে মূলত পানি চুরি, অপচয় ও মিটার রিডারদের কারসাজিকে উসকে দিচ্ছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় যেখানে পানির জন্য হাহাকার, সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধান না করে নতুন করে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এ বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ’র সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।