Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকার বাইরে ‘দ্বিগুণ’ হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা


৮ আগস্ট ২০১৯ ২৩:০৮

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ১৬৭ জন, যা ১ আগস্ট ছিল ৫৯০ জন।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসের প্রথম ৮ দিনে ৭ হাজার ৯৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সচেতন না হলে ঈদের ছুটিতে আক্রান্তের এই হার আরও বাড়তে পারে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ১ আগস্ট ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ৫৯০ জন রোগী। আগস্টের ২ তারিখ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৭ জনে। ৩ আগস্ট ৬৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হলেও, এই সংখ্যা ৪ আগস্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ জনে। ৫ আগস্ট ৯০৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন।

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একহাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ আগস্ট। এদিন ১ হাজার ৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। আর ৭ আগস্ট ১ হাজার ১৫৩ জন এবং ৮ আগস্ট ১ হাজার ১৬৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকেই দেখা গেছে এই রোগের সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেই দেখা গেছে ঢাকা ঘুরে যাওয়ার পরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া আশেপাশের শহরগুলোতেও এটা হতেই পারে। কারণ মশা কিন্তু বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমেও ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। সেজন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছিলাম ঈদের বন্ধে বাড়ি যাওয়ার আগে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যেনো স্প্রে করা হয়। এটা আগে কখনো করা হয়নি। এখন বলছে করা হবে। এইক্ষেত্রে কিছু গাফিলতির জন্যেই ঢাকার বাইরেও এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে।’

বিজ্ঞাপন

উত্তরণের একমাত্র পথ সচেতনতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তা ভেবে সবার সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের স্বস্তি এনে দিতে পারে কিছুটা।’

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি বলবো ডেঙ্গু রোগের দ্বিতীয় পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল ডেঙ্গু। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা শহর এবং উপজেলাতে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অনেক স্থানেই ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের রোগী ও ডেঙ্গু হেমারোজিক ফিভারে ভোগা রোগীদের ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই আমরা এমন কিছু রোগী পাচ্ছি যাদের আইসিইউ সাপোর্টের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে পাঠানো হচ্ছে। এটি একটি আশঙ্কাজনক ও বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি অবস্থা।’

বর্তমান অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সতর্কতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিকে খুব জরুরি বলে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘কোনো গর্ভবতী নারী অথবা ১ বছরের কম বয়সের শিশুর জ্বর হলে কোনো দেরি করা যাবে না। দ্রুতই সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে চলে যেতে হবে। এমনিতে যদি কারো জ্বর হয়ে থাকে তাহলে উনাকেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যাদের জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা এগুলো থাকবে তারাও নিকটবর্তী কোনো হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। অবস্থা বেশি খারাপের দিকে গেলে যেসব স্থানে আইসিইউ সেবা আছে সেখানে যেতে হবে রোগীকে।’

জ্বর আসার পরে সবাইকে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট বা তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘যদি কারও জ্বর হয়, সে যে ধরনের জ্বরই হোক না কেন ওনাকে প্রচুর পরিমানে পানি, তরল খাবার, ফলের রস, বিভিন্ন ফল খেতে হবে। সব ধরণের খাওয়াই খাবে। একই সঙ্গে প্রতিটি জ্বরের রোগীকে মশারির নিচে রাখতে হবে যাতে নতুনভাবে অন্য কারো জ্বর না আসে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক রোগী আসছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঢাকার বাইরে যাওয়ার পূর্বে রক্ত পরীক্ষা করে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। যাতে ঈদের বন্ধে আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়ে।’

প্রতিরোধের একমাত্র উপায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধি করা বাদে ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্য কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঘর এবং আঙিনা পরিষ্কার রাখতেই হবে। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা হলো এক ধরনের গৃহপালিত মশা। তাই মানুষ যদি সচেতন না হয় তবে কখনো এর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব না। মশা থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ মশা উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে দেওয়া।’

যাদের ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু হয়ে গেছে তাদেরও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে জানান ডা. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু যাদের হয়েই গেছেও নারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিপদসীমার বাইরে না। অবশ্যই সেই সময়ে মশারি ব্যবহার করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে দেশের সব জেলা সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত NS1 কিট সরবরাহ করা হয়েছে বলা জানানো হয়। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগের ব্যবস্থাপনার জন্য মাতুইয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালে ৫০ শয্যার ডেঙ্গু ইউনিট চালু করার কথা জানানো হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং জনসচেতনতা সৃষ্ঠিতে ১৬ লক্ষ স্কাউটকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ৩৪ হাজার ৬৬৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৮৭২ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ হাজার ৭৬৫ জন।

ডেঙ্গু ডেঙ্গু আক্রান্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর