‘এখন সারাবছরই এডিস মশা দেখা যাবে’
৯ আগস্ট ২০১৯ ১৪:১৮
ঢাকা: ‘পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে বাংলাদেশে এখন সারাবছরই এডিস মশা দেখা যাবে। এই মুহূর্তে মশা কমানো খুব কঠিন। মানুষ সচেতন না হলে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার কমবে না।’
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সারাবাংলা’র সঙ্গে আলাপকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার এসব আশঙ্কার কথা জানান। মশা নিয়ে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। মশার ওপর বিভিন্ন ধরণের গবেষণাও রয়েছে তার।
সাক্ষাৎকারে কবিরুল বাশার জানান, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে পাঁচবছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটির অনুমোদন পেলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশাপাশি এডিস মশা চেনার উপায়, কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর এড়ানো সম্ভব ইত্যাদি নিয়েও বিস্তারিত আলাপ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক বাশার বলেন, ‘এডিস মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোঝার উপায় নেই। ভাইরাসবাহিত এডিস মশা কামড়ানোর ৩/৪দিন পর জ্বর আসে। এর আগে, কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই এডিস মশা কামড় দিয়েছে। এই মুহূর্তে যারা বাসে ট্রেনে লঞ্চে, এমনটি প্লেনে যাচ্ছেন তাদের জন্য ঝুঁকি রয়েছে। কারণ পোকা-মাকড়ের বিস্তার পরিবহনের মাধ্যমেই হয়।’
এডিস মশা সাধারণত কখন বেশি কামড় দেয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এডিস মশা গভীর অন্ধকার পছন্দ করে না, হালকা আলো পছন্দ করে। যে কারণে দিনেই এডিস মশা বেশি কামড়ায়। রাতের উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে, তবে ঝুঁকি সারাদিনই বেশি থাকে।’
‘পরিস্থিতি এখন যেমন দাঁড়িয়েছে, তাতে বাংলাদেশে এখন সারাবছরই এডিস মশা দেখা যাবে। এই মুহূর্তে মশা কমানো খুব কঠিন। তবে ডেঙ্গু জ্বর কমতে অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে জনগণ সম্পৃক্ত হলে, সিটি করপোরেশন সক্রিয় থাকলে আগেও কমতে পারে,’ বলেন এই গবেষক।
মশা নিয়ন্ত্রণ, কমানো বা নিধন করার বিষয়ে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘ড্রেনে কার্পজাতীয় মাছ ছেড়ে কিউলেক্স মশা কমানো যেতে ডারে। তবে এডিস মশা নয় কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহারে টাইম ও ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজন। প্রতি ৭দিন অন্তর লার্ভিসাইড, ৭ দিন অন্তর অন্তর অ্যাডাল্টিসাইড দিতে হবে। সেখানে এক মাস পর পর দিলে তা কমবে না। একটা নিয়মিত বিরতিতে মশা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে। মশার জীবন চক্রের ভিত্তিতে ওষুধ ছেটাতে হবে। একটি মশা লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকার সময় ৭দিন। এর মধ্যেই ওষুধ ছেটাতে হবে।’
ঢাকায় মশা এবং ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১২৩ প্রজাতির মশা রয়েছে। একেকটি মশার চরিত্র একেক রকম। অ্যানোফ্লিক্স মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এডিস ছড়ায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিউলেক্স মশা ছড়ায়। কিউলেক্স মশার সংখ্যাই ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। কিউলেক্স ড্রেন-ডোবায় হয়। এডিস মশা হয় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে, দুটোর চরিত্র আলাদা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও ভিন্ন। ১৯৫৩ সালের পর এবছরই ফেব্রুয়ারি মাসে এত বৃষ্টিপাত হলো। যার ফলে বছরের শুরুতেই একটা বড় কমিউনিটির এডিস মশার জন্ম হয়েছে। জুন মাস নাগাদ এই এডিস মশার কমিউনিটি আরও বড় হয়ে উঠেছে। এডিস মশার ঘনত্বের মাত্রা ২০ ছাড়িয়ে গেলে এই মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেটাই হয়েছে এবং সে কারণে ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।’
তবে এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু জ্বর হবে তা নয় এমনটা জানিয়ে এই গবেষক বলেন, ‘এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করলেই তা ডেঙ্গু ছড়াবে। ডেঙ্গুবাহী জীবাণু বহন করে না এমন এডিস মশা কামড়ালেও ডেঙ্গু হবে না।’
সাধারণ লোকেরা কিভাবে এডিস মশা চিনতে পারবে জানতে চাইলে কবিরুল বাশার বলেন, ‘বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানিতে ছোট ছোট পোকামাকড় নড়তে থাকলেই বুঝতে হবে সেটি এডিস মশার লার্ভা। এডিস মশার গায়ে ও পায়ে সাদাকালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। গায়ে ডোরাকাটা দাগ অন্য মশারও রয়েছে। তবে পায়ে ডোরাকাটা একমাত্র এডিস মশারই।’
পায়ে ডোরাকাটা দাগ পেলেই নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যাবে এটি এডিস মশা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোনো মশার পায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে না। মানুষ সচেতন হয়ে একযোগে যদি বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করে তবেই এটা বন্ধ হবে।’