মুগদা হাসপাতালে দুই দিনে ২১৬ নতুন ডেঙ্গু রোগী
১০ আগস্ট ২০১৯ ১৬:১১
ঢাকা: দুপুর ২ টা। মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খায়রুল আলম নিজ কক্ষে দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সামনে ভাতের প্লেট। হটপট টিফিন বক্সের ঢাকনা এখনও খোলেননি। এরই মধ্যে একজন সংবাদকর্মীর আগমন।
বুক পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে বলতে শুরু করলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৫৫৩ জন। এর মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪২৭ জন, শিশু ওয়ার্ডে ১০০ জন, কেবিনে ২৪ জন, সার্জারি ইউনিটে ২ জন। গ্র্যান্ড টোটাল ১,৭১৫ জন।
দুই দিন আগে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ১৪৯৯ জন। অর্থাৎ গত দুই দিনে মুগদা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন। সঙ্গত কারণেই চিকিৎসক, নার্স, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বলছেন- দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ততই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। রোগীর আত্মীয় স্বজনরা তো বটেই, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা প্রতিটা মানুষ রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে। কবে নাগাদ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে, তা কেউ জানে না।
সাধারণত, ঈদ, পূজা, বড়দিনের মত প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় থাকে কম। বেশিরভাগ চিকিৎসক-নার্স, কর্মচারী-কর্মকর্তা থাকেন ছুটিতে। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা আগে-ভাগেই চলে যান ঢাকা অথবা দেশের বাইরে। ঈদ উদযাপন করেন পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে।
কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডেঙ্গু এবং বন্যার কারণে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ ছুটি পাবেন না। সরকারের এ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বাধ্য সরকারি প্রত্যেক কর্মচারী।
সে কারণেই হয়তো গত ১৫ দিনে একটি বারের জন্যও মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খায়রুল আলম তার দফতর ছাড়েননি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তিনি হাসপাতালে উপস্থিত। শুক্র-শনিবারও অফিস করছেন ডা. খায়রুল আলম। ডেঙ্গুর প্রতি মুহূর্তের আপডেট অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। জানিয়ে দিচ্ছেন গণমাধ্যমকে।
‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে কি না?’— শনিবার দুপুরে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খায়রুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৫৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। গত দুই দিনে নতুন ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন। এটাকে তো আর উন্নতি বলা যায় না।’
গত দেড় মাস ধরে ডেঙ্গু রোগীর সেবা দিতে দিতে মুগদা হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন নার্স ও ৭ চিকিৎসক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার নতুন করে আরেকজন নার্সও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
রোগীর চেয়ে জনবল কম হওয়ায় মুগদা হাসপাতালে নার্সরা পড়েছে সব চেয়ে বেশি বিপাকে। শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ডে ৫০০ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ১১ জন নার্স। ৪২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ও ৭৩ জন সাধারণ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে নার্সদের। সাপ্তাহিক ও ঈদের ছুটি— সবকিছু ভুলে গিয়ে টানা ডিউটি করছেন তারা।
মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্য রাহেলা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ঈদ উৎসব নেই। কাঁধের ওপর আছে কেবল দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করছি। বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’
এদিকে শনিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে মোট ১,৭১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন ১ হাজার ১৪৯ জন, মারা গেছে ১৩ জন। আর এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ৫৫৩ জন।