হোটেল ওলিও: ১৪ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত
১১ আগস্ট ২০১৯ ১৯:০৩
ঢাকা: দুই বছর আগে রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অবস্থান নিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। খুব শিগগিরই আদালতে এই চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
২০১৭ সালে ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালান কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাইফুল ইসলাম নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছেন। হামলার পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই সময় কলাবাগান থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। ওই মামলার একজন ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ায় বাকি ১৪ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চার্জশিট প্রস্তুত করেছে সিটিটিসি। তারা সবাই গ্রেফতার রয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর তদন্ত শেষে হোটেল ওলিও তে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পায় আমরা। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৫ জন হলেন- আকরাম হোসেন খান নিলয়, তানভীর ইয়াসিন কবির, আবু তোরাব খান, সাদিয়া হোসনা লাকি, হুমায়রা জাকির নাবিলা, তাজরীন খান শুভ, আব্দুল্লাহ আয়চাঁদ, কবি খান, আবুল কাশেম ফকির সরদার ওরফে শহীদ মিস্ত্রি, তাজুল ইসলাম, নাজমুল হাসান মামুন, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ, কামরুল ইসলাম শাকিল, তারেক মোহাম্মদ আদনান এবং সাইফুল ইসলাম হামলাকারী সকলেই নব্য জেএমবির সদস্য।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। তবে ঘটনাস্থলে একজন ঘটনাস্থলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। তাই তাকে বাদ দিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মাস্টারমাইন্ড আকরাম হোসেন খান নিলয়, তানভীর ইয়াসমিন, কবির খান, সাদিয়া হুমায়রা, জাকির নাবিলা ও তাজরীন খান শুভ।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহ করে আবুল কাশেম ফকির লুলু, সরদার ওরফে শহীদ মিস্ত্রি ও তাজুল ইসলাম। বোমা প্রস্তুত করে নাজমুল হাসান মামুন আর আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছিলেন সাইফুল ইসলাম (ঘটনার সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত)। এই ঘটনায় আশ্রয়দাতা ও সহায়তাকারী নব মুসলিম আব্দুল্লাহ কামরুল ইসলাম শাকিল, তারেক মোহাম্মদ আদনান ও আব্দুল্লাহ চাঁদ এবং কবি রাজ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকত ১৪ জন আসামির মধ্যে ১৪ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
জঙ্গিদের পরিকল্পনার বিষয়টি বর্ণনা করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও ধারাবাহিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং প্রতিশোধ স্পৃহায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন একত্রিত নব্য জেএমবি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের র্যালিতে হামলার উদ্দেশ্যে হোটেল ওলিও তে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে পুলিশের অভিযান চলাকালে এক জঙ্গি আত্মঘাতি বিস্ফোরণ ঘটায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার সাইফুল ইসলাম ও ডিএমপি মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত কমিশনার ওবায়দুর রহমানসহ অন্যরা।