ক্রেতারা বলছে দাম বেশি, বিক্রেতারা বলছে ক্রেতা কম
১১ আগস্ট ২০১৯ ২২:৪২
ঢাকা: মহাখালী ডিওএইচএসের বাসিন্দা আফজল হোসেন। গরু কিনতে এসেছেন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের গরুর বাজারে। কথা বলতেই জানা গেলো এই বাজার থেকে গত বছর নিজের বাজেট অনুযায়ী গরু কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দাম অনেক বেশিই মনে হচ্ছে ওনার কাছে।
সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ বাজেটের চাইতে গরুর দাম অনেক বেশি বলছে। ভেবেছিলাম শেষ দিনে দাম কমবে। কিন্তু তেমন কিছু দেখলাম না। অথচ অনেকেই বলছে অন্যান্য বাজারে গরুর দাম কম, গরুও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এখন তাই অন্য বাজারে যাব।’
উত্তরা ৩ নাম্বার সেক্টরের বাসিন্দা আমিরুল মোরশেদ। পেশায় একজন চিকিৎসক। প্রতিবার গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেন কিন্তু এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে যাওয়া হয়নি। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের গরুর বাজারে এসে নিজের পছন্দমতো গরু না পাওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঝারি মাপের একটা গরুর দামও এখানে অনেক বেশি চাইছে। এখন তাই আর গরু নেব না। যদি দাম না কমে তাহলে অন্য বাজারে যাব।’
উত্তরা ২ নম্বার সেক্টরের বাসিন্দা কামাল হোসেন। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি গরু কিনেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা দিয়ে। দাম নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এখনো অনেক গরু আছে। তবে দাম কিছুটা বেশি হলেও কোরবানির বাজারে এটাকে আসলে অস্বাভাবিক কিছু মনে করছি না। বেপারিরা দাম বেশি কমাচ্ছে না এখনো। আমি যেটা নিয়েছি সেটার দাম গতকাল চেয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার। আজকে আমার বাজেটেই পেয়ে গেছি। ‘
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের গরুর বাজার ঘুরে এমন ভিন্ন চিত্রই দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে।
বিক্রেতারা অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। কুষ্টিয়া থেকে আসা মিরাজ হাসান। ৪৪ টি গরু নিয়ে এসেছিলেন এবারের বাজারে। ৩৫টিই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখনো বাজারে বিক্রির আশায় আছেন বাকি গরুগুলো।
দাম বেশি চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দূর থেকে এসেছি। গাড়িভাড়ার খরচ সহ আরও অনেক খরচই আমাদের দিতে হয়। এখানে আমরা ন্যায্য দামটাই চাচ্ছি তবে ক্রেতা কিছুটা কম মনে হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে ৭ টি গরু নিয়ে এসেছিলেন রমিজ মিয়া নামে এক বিক্রেতা। ৪টি বিক্রি করেছেন। বাকি তিনটি গরুর মধ্যে একটিও যদি বিক্রি করতে পারেন তবে কুষ্টিয়া ফিরে যাবেন বলে জানান।
বিক্রি নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্টির কথা শুনিয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ শনিবার পর্যন্ত বাজারে প্রচুর ক্রেতা ছিল। আজ (রোববার) ক্রেতার সংখ্যা তেমন বেশি না আর ন্যায্য দামও দিতে চাচ্ছেন না অনেকেই। খরচটা উঠে গেলেও গরু বিক্রি করে দিচ্ছি আমি লাভের আশা বাদ দিয়ে। কিন্তু সেই খরচের সমান দামও অনেকেই বলছেন না।’
পাবনা থেকে আসা আক্কাস আলী এবার বাজারে একটি গরুই নিয়ে এসেছেন তিন দিন আগে। এখনো বিক্রি হয়নি দেখে হতাশাভরা কণ্ঠে সারাবাংলাকে বলেন, ‘চার বছর ধরে লালন-পালন করেছি এই গরু। শুনেছি ঢাকায় অনেক দামে গরু বিক্রি হয় তাই এবারই প্রথম ঢাকার বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু কেউ ন্যায্য দাম বলে না আর আজকে তেমন ক্রেতাও নেই বাজারে। তাই এই গরু নিয়ে এলাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছি। কেজি মাপা বিক্রি করলেও এর চাইতে বেশি দাম পাবো।’
সরেজমিনে গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে ছোট আকৃতির গরু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার, মাঝারি আকৃতির গরু ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার এবং বড় আকৃতির গরু ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।
গরু হাটের কমিটির দায়িত্বে থাকা একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা এবারের হাটে গরুর বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাজেটেই এবারের গরু পাওয়া যাচ্ছে বেশি বলে জানান তিনি।
বাজারে প্রচুর সংখ্যক ছাগলও এসেছে। আকারভেদে দামও ২০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
উল্লেখ্য, এ বছর রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট বাদে ২১টি জায়গাতে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।