এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির ৬ কোটি টাকার স্প্রে
১২ আগস্ট ২০১৯ ১৪:২৫
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এরইমধ্যে নতুন মশার ওষুধ আমদানি করে মাঠ পর্যায়ে ছিটানোর কাজ শুরু করলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) কোনো খবর নেই। এমনকি ডিএসসিসির কর্মকর্তারাও ঠিক করে বলতে পারছে না কবে নাগাদ মশার ওষুধ আনা যাবে।
এদিকে, এডিস মশা ধ্বংসে ফগিং মেশিনের প্রয়োগ পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। ওষুধের নমুনা পরীক্ষার জন্য আনা হলেও সঠিক মেশিন না থাকায় কার্যকর পরীক্ষাও করতে পারেনি ডিএসসিসি। এই অবস্থায় বাজারে মশা নিধনে এরোসল স্প্রে কিনছে ডিএসসিসি। এরইমধ্যে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই লাখ পিছ অ্যারোসল ক্যান কেনা হয়েছে। পরে আরও অ্যারোসোল কেনা হবে বলে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এই অ্যারোসলগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ না এনে অ্যারোসল কেন কেনা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে, এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোশেনের মেয়র সাঈদ খোকন বিশস্বাস্থ্য সংস্থার কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপালের মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, যেহেতু ফগিং মেশিনে এডিস মশার র্লাভা ধ্বংস হয় না তাই স্প্রে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বলেন, এডিসের জন্ম ঘরে জমে থাকা পানিতে হয়ে থাকে, সেহেতু ঘরের দিকেই নজর দিতে চায় ডিসিসি।
তবে সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এডিস মশার উৎপত্তি শুধু ঘরেই নয়, বাইরেও। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গর্তে জমে থাকা পানিতেও জন্মাতে পারে মশা।’
সে জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় থাকা জরুরি। পাশপাশি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এ কাজে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেই উদাসীন দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন। গেল দশ বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায় তুলে ধরে, ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে একত্রিত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে আইসিসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় মশা নিধনে ওষুধ কাজ না করার বিষয়টি সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কার্যকর ওষুধ আনতে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশে বিদেশ থেকে এডিস মশা নিধনে ওষুধ ম্যালাথিয়ন আনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর ব্যবহার কী প্রক্রিয়ায় কীভাবে হবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
এ প্রসঙ্গে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, শিগগরিই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে।
যদিও ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা কিটের অভাব কেটেছে বলে জানিয়েছেন ঔসধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহাবুবুর রহমান। বলেছেন, এরই মধ্যে কোরিয়া ও ভারত থেকে দুই লাখেরও বেশি কিট আমদানি করা হয়েছে। অন্যদিকে ৬ আগস্ট থেকে দেশীয় কোম্পানি ওএমসি এরই মধ্যে ৬০ হাজার কিট তৈরি করেছে।
এদিকে মশা মারতে বিদায়ী অর্থবছরে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করলেও মশা তো মরেইনি বরং চলতি বছরের সাত মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। জুনের শুরুতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়তে থাকলেও জুলাইয়ের শেষে তা দেশের সকল জেলায় ছড়িয়ে পরে আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা।