Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সবকিছু উৎসর্গ করেছি মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য: প্রধানমন্ত্রী


১২ আগস্ট ২০১৯ ১৪:৩৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহার খুশির দিনে শোকাবহ ১৫ আগস্ট স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে যারা বেঁচে আছেন, তারাই শুধু বুঝতে পারবেন আমাদের মনের কষ্ট। জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে উৎসর্গ করেছি বাংলার মানুষের ভাগ্য গড়ে তোলার জন্য। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

বেলা ১১টার দিকে গণভবনে সমবেত দলীয় নেতাকর্মী ও সব জনগণের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার সঙ্গে ছিলেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিচারক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, বিদেশি কূটনীতিক, সিনিয়র সচিবগণ এবং সচিব মর্যাদার অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত নেতা-কর্মী, দেশবাসীসহ প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আমরা জানি যে, এই ঈদ মহান ত্যাগের। ত্যাগের বিষয় নিয়ে আামদের সামনে এসেছে। বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন।

শোকের মাসে শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাস শোকের মাস। আগস্ট মাস আসলে কষ্ট ব্যথা নেমে আসে। আজকে ১২ আগস্ট। এখনো তিনি বেঁচে ছিলেন, মৃত ছিলেন না। আমরা সেই সময় বিদেশে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে টেলিফোনে শেষ কথা হয়েছিল, ১৩ আগস্ট। তারপর ১৪ আগস্টও আমরা কথা বলেছিলাম।’

‘আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কারণ আপনারা যারা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন, তাদের শুধু বুঝতে পারবেন আমাদের মনের কষ্ট। এই কষ্ট-দুঃখ-বেদনা, সব কিছু বুকে ধারণ করেও জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে উৎসর্গ করেছি নিজেকে বাংলার মানুষের ভাগ্য গড়ে তোলার জন্য’- বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সব সময় এই কথাই মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ একটু ভালো থাকলে আমার বাবা-মায়ের আত্মা শান্তি পাবে এবং যে স্বপ্নটা তিনি দেখেছিলেন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবার, সেটুকু করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।’

আর এই লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীরা অত্যাচারিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, মুত্যু বরণ করেছেন, আহত হয়েছেন; অনেক পরিবার স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের কথাও স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শত প্রতিকূলতার মাঝে আমরা বাংলাদেশকে আজকে সারাবিশ্বের কাছে একটা মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দর জীবন পায়, বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেন উন্নত হয়। বাংলাদেশকে আর কোনোদিনও খাটো করে দেখতে না পারে, বাংলাদেশ যেন বিশ্বের দরবারে একটা মযার্দা নিয়ে চলতে পারে। বাঙালি জাতি যেন বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, আজকে যে মর্যাদাগুলো অর্জন করেছি, এটা ধরে রেখেই আমরা সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে চাই, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করছি।

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা আস্থা রেখেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন এবং আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। তাদের এই আস্থা বিশ্বাসের মর্যাদা আমরা দিয়ে আসব এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

ঈদের খুশি সকলের ঘরে ঘরে আসুক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত এই দিনে মানুষকেও মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে যেকোন ত্যাগ স্বীকারের জন্য আরও উৎসাহ পাবে এবং দেশ যেন আরও উন্নত হয়, এগিয়ে যায় সেই কামনা করেন।

পাশাপাশি যারা সৌদি আরবে হজ করতে গেছেন তারাসহ বিশ্বের মুসলিম উন্মাহর প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানান তিনি।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে গণভবনে উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং দোয়া করবেন, ভোটাররা যে পবিত্র দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, যেন সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে বাংলাদেশের মানুষকে আরও সম্মানিত করতে পারি, আল্লাহ রাব্বুলআলামিনের কাছেই সেই দোয়া চাই।

সম্প্রতি প্রায় তিন সপ্তাহ লন্ডন অবস্থান করে চোখের অপারেশন করার বিষয়টি অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে মাত্র কয়েকদিন আগে আমার চোখের অপারেশন হয়েছে। আসলে বয়স হয়ে গেছে, দেখতেও কম পাই। ছানির অপারেশন করতে হয়েছে। কাজেই সেই ছানি অপারেশনের এখনো এক মাস পূর্ণও হয়নি। এখনো ঔষধ নিতে হচ্ছে। আপনারা দোয়া করবেন যেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারি।

তার আগে দলের সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে নেতারা। এসসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুরনাহার লাইলী, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঈদ প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর