চসিকের সর্বশক্তিতে সন্ধ্যার মধ্যেই ‘প্রায় ঝকঝকে’ নগরী
১২ আগস্ট ২০১৯ ২০:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে— সেজন্য এবার ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
বিকেল ৫টার মধ্যে নগরীর মূল সড়ক এবং রাত ৮টার মধ্যে অলিগলি পরিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই মূল সড়কের পাশাপাশি নগরীর অলিগলিতে পড়ে থাকা বর্জ্য প্রায় অপসারণ করে ফেলেছে করপোরেশন।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু সড়কের পাশে এবং ডাস্টবিনে বর্জ্য থাকলেও অধিকাংশ এলাকা পরিচ্ছন্ন।
এর মধ্যে কয়েকটি এলাকায় পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার না ছিটানো হয়নি— এমন অভিযোগ উঠেছে।
এদিন সকাল ৯টা থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ২৭৩টি গাড়িতে বর্জ্য অপসারণ করছেন। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিকেল ৫টার মধ্যে মূল সড়ক এবং রাত ৮টার মধ্যে অলিগলিসহ পুরো নগরী শতভাগ পরিচ্ছন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা বিকেলের মধ্যেই মূল সড়ক বর্জ্যমুক্ত করেছি। অলিগলি পরিষ্কারের কাজ চলছে।’
বিকেলে নগরীর টাইগার পাস, কদমতলী, আমবাগান, চৌমুহনী এলাকার মূল সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোরবানির পশুর বর্জ্য নেই। তবে পাথরঘাটার সতীশ বাবু লেন, এনায়েত বাজার, সার্সন রোড, আসকার দিঘীর পাড়ায় গলিতে গলিতে রক্তমাখা চাটাই, গরুর মাথার বিচ্ছিন্ন অংশবিশেষ, জিহ্বার অংশ, রক্ত, লেজের অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেছেন, ‘অনেকে সকালে কোরবানি দিয়েছেন, অনেকে দিয়েছেন দুপুরে। সকালে যেসব পশু কোরবানি হয়েছে, মূল সড়ক ও অলিগলি মিলিয়ে তার শতকরা ৬০ ভাগ বর্জ্য আমরা দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার করে ফেলেছি। বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণে সক্ষম হয়েছি। তবে দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে যেসব পশু কোরবানি হয়েছে, সেগুলোর বর্জ্য অপসারণে সময় লাগছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা সব বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হবো।’
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলররা এবার প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণে সচেষ্ট ছিলাম। আমার ওয়ার্ডে দুপুর ২টার মধ্যেই সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। রাস্তা পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে নগরীর উত্তর কাট্টলী, মোহরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্লিচিং পাউডার না ছিটানোর অভিযোগ এসেছে। উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দা শাহেদ আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ময়লা নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ব্লিচিং পাউডার দিচ্ছে না। কয়েকজন সেবককে (পরিচ্ছন্ন কর্মী) জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানায়— ব্লিচিং পাউডারের সংকট আছে। ব্লিচিং পাউডার না ছিটালে তো দুর্গন্ধ ছড়াবে।’
পশু কোরবানির জন্য এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ৩১৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত স্থানে যেতে নগরবাসীর আগ্রহ দেখা যায়নি। বাড়ির সামনে, অলি-গলিতে এবং ফ্ল্যাটের পার্কিং প্লেসে কোরবানি করতে দেখা গেছে।
এদিন বিকেলে আলমাস সিনেমা মোড়, কাজীর দেউড়ি, লাভ লেন মোড়, নিউমার্কেট, সদরঘাট, মাদারবাড়ি এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবার যেহেতু ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, সে জন্য আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে আলাদা সতর্কতা অবলম্বন করেছি। কোথাও যেন বর্জ্য বা পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।’
নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী, শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কান্তি দাশ ও সুদীপ বসাক।