নাটোর: নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করে এলাকা থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সরকার নির্ধারিত দাম মাথায় রেখে এলাকা থেকে চামড়া কিনলেও আড়তদারদের সিন্ডিকেটে তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ফলে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফরিয়ারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোরের চামড়ার আড়তে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্নস্থান থেকে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফরিয়ারা। নাটোর শহরের রেলস্টেশনের পাশে চকবৈদ্যনাথ এলাকার অর্ধশত আড়তে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চামড়া নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
নাটোরের হাটে চামড়া বিক্রি করতে আসা কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে জানান, এই আড়তের সিন্ডিকেট ৫০০ টাকার বেশি কোন চামড়ায় দিতে চাইছে না। এবারে ইন্ডিয়ান গরু কম আসায় দেশি গরু কোরবানি হয়েছে বেশি, এবারের চামড়ার গুণগত মান ভালো। সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনলেও আড়তে এসে অর্ধেক দামও পাওয়া যাচ্ছে না।
পাবনার চাঁদপুর থেকে নাটোরে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ী মালেক মিয়া সারাবাংলাকেবলেন, ‘১০৪ টি বড় ষাঁড়ের চামড়া ৮০০ টাকা করে কিনে আড়তে এসেছি আমি। কিন্তু এখানে আসার পর প্রথমে ২০০ টাকা করে দাম বলেছে। আমি তখন বিক্রি না করায় এখন ২০০ টাকা করেও দাম দিতে চাইছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমি চামড়ায় লবণ দিয়ে রেখে চলে যাচ্ছি।’
রাজশাহীর মোহনপুর থেকে ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চামড়া প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে লসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে কেউ চামড়ায় কেনা দামও বলছে না। এমনকি এখানে লবণ দেওয়াও লোক নেই। বাধ্য হয়ে লসেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
পাবনা থেকে খাসির চামড়া বিক্রি করতে আসা রাসেল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি খাসির চামড়া আমি এলাকা থেকে কিনে এনেছি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু এখানে আসার পর ১০ টাকা করে দাম বলছে। এতো দূর থেকে এতো লসে চামড়া বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।’
এদিকে, আড়তদারদের দাবি করছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কিনছেন তারা। নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহসভাপতি সারাবাংলাকে জানান, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনা শুরু করেছেন তারা। এখন চলছে লবনজাত করে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। আগামী শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ব্যবসায়ীসহ ট্যানারি মালিকরা আসবেন এখানে। তবে এবারে কম চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা। ফলে আমরাও খুব বেশি চামড়া সংরক্ষণ করে রাখছি না।’