জাতির পিতাকে হত্যা একটি করুণ ইতিহাস: গোলাম দস্তগীর গাজী
১৫ আগস্ট ২০১৯ ১৮:৫৬
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) এমপি বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যা একটি করুণ ইতিহাস।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)‘র উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম‘র সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব রীনা পারভীন। বক্তব্য রাখেন বিজেএমসির মহাপরিচালক শামসুল আলম। স্মরণসভায় বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) এমপি বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি সেই পাকিস্তানিদের হাতে বঙ্গবন্ধু মারা যাননি, তিনি মারা গেলেন আমাদের বাঙালিদের হাতে। কত বড় অকৃতজ্ঞ আমরা! আমরা জাতির পিতাকে নিজেরা হত্যা করেছি। এটা একটা করুণ ইতিহাস।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর ২১টি বছর অনেকে বঙ্গবন্ধুর নামই নেয়নি। অনেকে আবার ভয়েও নাম বলেনি। এমনও হয়েছে চাকরিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট শো করেননি। এই ছিল অবস্থা। এখন আবার বিরোধীশক্তি খুজে পাওয়া যায় না। সবই এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে হয়ে গেছে। এটাই আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য ‘
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চোখে দেখা ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর আমাদের লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা যারা তৃণমূলে ছিলাম। তারা আন্দোলন করে, করে, আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনলাম। আমাদের যেমন অনেক করুণ ইতিহাস আছে, তেমনি আবার গৌরবেরও ইতিহাস রয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গুবন্ধুর ছয় দফার মধ্যে আমাদের পাটের কথা রয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পাটের টাকা দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইসলামবাদ পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। আর পূর্ববাংলা অবহেলিত। আমরা না খেয়ে মরছি।’ বঙ্গবন্ধু পল্টন ময়দানে বারবার কথাগুলো বলতেন। আমরা শুনতাম। আগরতলা মামলায় উনি জেলে গেলেন, আবার ফেরত আসলেন। ৭০ সালের নির্বাচন তিনি স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ সালেল ৭ মার্চের ভাষণে আমরা বুঝলাম তিনি এবার স্বায়ত্তশাসন না, এক দফা স্বাধীনতা চেয়েছিলেন।”
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘এদেশের প্রায় সব মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। আর এই কারণেই আমরা নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু স্বাধীনতার পরেও পাকিস্তানি চক্র বসে ছিল না। যারা সেই সময়ে আমাদের সমর্থন করেননি। সেই দেশি চক্র এবং বিদেশি চক্রান্ত করে জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। কিন্তু সেই সময়ে যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তারা সবাই ঢাকা থাকত। আমরা সবাই তাদের চিনি। কিন্তু আমরা তা টেরও পায়নি। এই ধরনের ঘটনা ঘটবে আমরা বুঝতেও পারিনি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মত লোককে হত্যা করা হবে।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিজেএমসিকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন বিজেএমসির এককভাবে মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু যখন প্লাস্টিক আসলো, তখন পাট বাজার হারাতে শুরু করে। আর বিজেএমসি দিনদিন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। গত ১০ বছরে বিজেএমসিকে সরকার ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এই লোকসানের জন্য শ্রমিক নয় ম্যানেজমেন্ট দায়ী। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক বান্ধব, তাই শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এই খাতে তিনি ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। জনগণের টাকা আর কত ভর্তুকি দেওয়া হবে। বিজিএমসিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। যদি তা না পারে তাহলে ভবিষ্যতে লোকসানী মিলগুলো পিপিপি‘র মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রীনা পারভীন বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আজ তার ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী। এই দিনে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা স্বপ্ন আজ তার কন্যা শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
সভাপতির বক্তব্যে শাহ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বলা যেত না। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ঘাতকদের বিচারের আওতায় এনে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।’