গুহা ভাল্লুকের বিলুপ্তিতে বড় ভূমিকা ছিল প্রাচীন মানুষের
১৬ আগস্ট ২০১৯ ১৮:৩০
ঢাকা: প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে ইউরোপে মানুষের পূর্বপুরুষদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গুহা ভাল্লুকদের কমে যাওয়ার সঙ্গে যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বলছে, প্রাচীন মানুষেরা ইউরোপে প্রবেশ করেই ব্যাপকহারে গুহা ভাল্লুক শিকার করা শুরু করে এবং দলে দলে তাদের গুহার দখল নিয়ে নেয়। যা গুহা ভাল্লুককে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দেয়।
যদিও আগে থেকেই প্রাকৃতিক নানা রকমের চাপে ছিল ভাল্লুকের এই প্রজাতি। সেসব চাপ শুরু হয়েছিল সর্বশেষ বরফ যুগের পর তাদের খাবারের পরিমান সংকুচিত হয়ে যাওয়ায়। ধারণা করা হয়, ২৪ হাজার বছর আগে গুহা ভাল্লুক বিলুপ্ত হয়ে যায়।
গবেষণা দলের প্রধান জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ভেরেনা স্কুয়েমেন বলেন, ‘৪০ হাজার বছর আগে আমরা নাটকীয়ভাবে গুহা ভাল্লুকের সংখ্যা কমে যাওয়া দেখতে পাই। একই সময়ে আমরা শারীরিক ভাবে সুগঠিত মানুষদের ইউরোপে আগমণ দেখি। এই দুই বিষয়ের মধ্যেই আমরা বিলুপ্তির যোগসূত্র দেখতে পাই।’
‘মানুষের পূর্ব পুরুষদের এই আগমণ গুহা ভাল্লুকদের বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছিল। যার স্পষ্ট প্রমাণ এখন আমাদের হাতে রয়েছে’, বলেন এই অধ্যাপক।
গবেষকরা সুইটজারল্যান্ড, পোলান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি ইটালি এবং সার্বিয়া থেকে পাওয়া গুহা ভাল্লুকের হাড় থেকে মাইক্রোনড্রিয়াল ডিএনএ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা গুহা ভাল্লুকের জীবনচক্র চিহ্নিত করতে পেরেছেন। কিভাবে তারা এই এলাকায় আরও অনেক প্রাণীর সঙ্গে বাস করতো সে বিষয়টিও জানতে পারা গেছে।
এখান থেকে দেখা গেছে, ৪০ হাজার বছর আগেও গুহা ভাল্লুকের বংশ বিস্তার মোটা দাগে স্থিতিশীলই ছিলো। এসময়ে তারা দু’টি বরফ যুগ ছাড়াও আরও কয়েকটি ছোট-বড় শীতল যুগ পার করে টিকে ছিলো। মানুষের পূর্ব পুরুষেরা ইউরোপে প্রবেশ করে গুহা ভাল্লুককে বিলুপ্তির কিনারে ঠেলে দেয় বলে যে ধারণা ছিলো এই গবেষণাতে তার নতুন প্রমাণ মিলেছে।
এতদিন গুহা ভাল্লুকের বিলুপ্তির বিষয়ে নানা ধরণের বিতর্ক ছিলো। একদল বলতেন, প্রকৃতির বিপর্যয়ের কারণেই গুহা ভাল্লুক বিলুপ্ত হয়েছে, আরেক দল ছিলেন মানুষের কারণে গুহা ভাল্লুক বিলুপ্ত হয়েছে এমন মতের পক্ষে। আবার একটি অংশ এই দুইয়ের কারণেই বিলুপ্তির কথা বলতেন।
তবে ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ এ প্রকাশিত এবারের গবেষণা মানুষসৃষ্ট কারণকেই প্রধান করে তুলেছে। এটি দেখিয়েছে গুহা ভাল্লুকের বিলুপ্তির পেছেনে মানুষ কত গভীরভাবে দায়ী। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও এ বিষয়ে এটিই শেষ কথা নয়।