আগাম বন্যা প্রতিরোধের উদ্যোগ
১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১১
ঢাকা: গোপালগঞ্জে আগাম বন্যা প্রতিরোধে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা (দ্বিতীয় পর্যায়)’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ রোধের মাধ্যমে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি, পোল্ডারের অভ্যন্তরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, নিস্কাশন ও সেচ সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া মাদারীপুর বিলরুট (এমবিআর) চ্যানেল ও মধুমতি নদীর ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে বসতবাড়ি, কৃষি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুর্নগঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, কাশিয়ানী উপজেলা এবং মুকসুদপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রকল্পের গ্রস এরিয়া ৬২ হাজার ২০৭ হেক্টর এবং নেট এরিয়া ৪৫ হাজার ৯৯৬ হেক্টর। প্রকল্প এলাকা মধুমতি নদী, মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেল এবং কুমার নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। প্রকল্পের দক্ষিণ ও পশ্চিমে মধুমতি নদী, পূর্ব ও উত্তরে মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেল এবং কুমার নদী। এই নদীগুলো অসংখ্য ছোট নদী ও খালের মাধ্যমে সংযুক্ত। গড়াই নদী বড়দিয়া নামক স্থানে দু’টি স্রোত ধারায় বিভক্ত হয়ে একটি নবগঙ্গা এবং অন্যটি মধুমতি নদী নামে পরিচিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে উজানের প্রবাহ না থাকায় ভাটি হতে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করে।
কুমার নদী ফরিদপুরের কাছে পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে উৎপত্তি হয়ে ফরিদপুর সদর, নগর কান্দা, ভাংগা ও মুকসুদপুর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিন্দিয়াঘাট এলাকায় মাদরীপুর বিল রুট চ্যানেলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেলটি নৌচলাচল সুবিধার জন্য বৃটিশ শাসন আমলে খনন করা হয়, যা আড়িয়াল খাঁ নদী এবং মধুমতি নদীর সংযোগ করেছে।
এই এলাকাটি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে সেচ কাজ ব্যহত হয়। অন্যদিকে, এমবিআর চ্যানেল দ্বারা লবণাক্ত পানি প্রবেশের ফলে উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার নিস্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর না থাকার কারণে এই এলাকায় সময়মত ইরি-বোরো ধান রোপন বিলম্বিত হয়। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সি (সিআইডিএ) অর্থায়নে ৯০ দশকের গোড়ার দিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিস্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য সমীক্ষা করা হয়।
এই সমীক্ষা প্রকল্প এলাকাকে ৬টি পোল্ডারে বিভক্ত করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিস্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ৬টি পোল্ডারের মধ্যে দু’টি পোল্ডারের আংশিক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ২০০৪ এবং ২০০৭ সালের বন্যার ফলে বাঁধ ও অবকাঠামোগুলি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৩.১৭৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৯৮ কিলোমিটার নদী খাল পুনঃখনন ও রাস্তা নির্মাণ, ১৩ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ২ কিলেমিটার মুকসুদপুর বাওড় খনন এবং একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রকল্পটির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না। তবে পুরোপুরি জানতে হলে অফিসে আসেন। তা না হলে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ এবং লবণাক্ত পানি প্রবেশ রোধের মাধ্যমে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি, পোল্ডারের অভ্যন্তরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, নিস্কাশন এবং সেচ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বসতবাড়ি, কৃষি জমি ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’
আগাম বন্যা পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা বন্যা প্রতিরোধ