Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনলাইনে হয়রানির শিকার মাধ্যমিকের ৬১.৬% শিক্ষার্থী


১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৯:১৭

ঢাকা: অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার হয়রানির শিকার হয় মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণায় জানানো হয়, যারা হয়রানির শিকার হন তারা মূলত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এসব হয়রানির মধ্যে যৌন হেনস্থা, মারধর, অনলাইনে ফোন নম্বর ছেড়ে দেওয়া কিংবা আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অপরাধ রয়েছে। হয়রানির শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ মেয়ে হলেও কিছু ছেলে শিক্ষার্থীও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘মিডিয়া লিটারেসি অ্যান্ড স্টুডেন্ট’স অব সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড মাদরাসা অব বাংলাদেশ: এন এক্সপ্লোরাটরি রিসার্চ’ শিরোনামের এ গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এ এস এম আসাদুজ্জামান।

গবেষণা জরিপ চালানোর সময় ২৪টি জিলা থেকে স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ২ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়। এই জরিপে উঠে আসে অনলাইন মাধ্যমে ঘটে যাওয়া নানা হয়রানির ভয়াবহ চিত্র।

গবেষণা থেকে জানা যায়, ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষার্থী অনলাইন মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছে। ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী কখনোই হয়রানির শিকার হয়নি বলে গবেষককে জানিয়েছে। এছাড়া ৯৯ জন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে উত্তর দেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে মাত্র ৫৬৪ জন শিক্ষার্থী হয়রানির কথা নিজেদের বাবা-মাকে জানিয়ে সাহায্য চেয়েছে। শতকরা হিসেবে যা মাত্র ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ভাই-বোনদের সঙ্গে আলোচনা করেছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ, শিক্ষকদের জানিয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং আত্মীয়-স্বজনদের জানিয়েছে দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

পুরো বিষয়টিকে ‘অশুভ লক্ষণ’ হিসেবে গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করেছেন গবেষক এ এস এম আসাদুজ্জামান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গবেষণায় হয়রানির যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তা আশঙ্কাজনক। গবেষণাটি বড় পরিসরে করতে পারলে হয়ত আরও ভয়াবহ দিক প্রকাশ পাবে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধানের দিকে যেতে হবে। যারা হয়রানি করেন তাদের মানসিকতা বুঝতে হবে এবং তাদের অপরাধপ্রবণ মানসিকতা থেকে যত্ন করে বের করে নিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অনলাইনে হয়রানির বিষয়টিকে পুঁজিবাদের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, পুঁজিবাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এর সঙ্গে রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সর্বগ্রাসী আগ্রাসন। ফলে সমাজে এ ধরনের সহিংসতা বাড়ছে, যার শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।’

অনলাইনে হয়রানি বন্ধে প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার না করতে সন্তানকে সতর্ক করতে হবে। এসব বিষয়ে সতর্ক না থাকলে বিভিন্ন রকম হয়রানির পাশাপাশি অনেক সময় আমাদের শিশুরা উগ্রবাদেও জড়িয়ে পড়তে পারে।’

এদিকে অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ নিজেদের বিপন্নতার কথা শিক্ষকদের কাছে জানিয়েছেন। এটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই হয়েছে বলে মনে করেন গবেষক আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা তাদের আস্থার জায়গাটি হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের এসব শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিপন্নতার কথা শিক্ষকদের কাছে প্রকাশ করতে ভয় পান, অথবা নিরাপদ বোধ করেন না।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক রাউফুন নাহার লিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্পর্ক কখনোই খুব বেশি ভালো ছিল বলা যাবে না। এমন দূরত্ব আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে যে কোনো হয়রানির শিকার হলে কোথায় সহযোগিতা চাইতে হবে, কার কাছে বলতে হবে এ ব্যাপারে ক্লাসে আলোচনা করা যেতে পারে। ক্লাসে পড়াশোনায় ভালো হওয়ার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়েও তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোতে মনোবিদ নিয়োগ করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের এই ধরনের সমস্যায় তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই সহযোগিতা পায়। এছাড়া শিক্ষকদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করতেও সরকারকে মনোযোগী হতে হবে।’

অনলাইন মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়রানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর