‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের আহ্বান খালেদার
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২১:০২
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ‘শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায়ের আগের দিন বুধবার গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
দেশবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার আবেদন, আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। আপনারা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলদেশে সব সময়ই ছাত্র-যুবক তরুণেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আজ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেই ছাত্র জনতা, ২০ দলসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক দল, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে আমি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগেও অনেকে আছেন যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন এবং ভবিষ্যত পরিণতির কথা ভাবেন। তাদের প্রতিও আমার একই আহ্বান রইল।’
সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আগামীতে অনেক ফাঁদ পাতা হবে, অনেক ষড়যন্ত্র হবে, সবাই সাবধান ও সর্তক থাকবেন। বুঝে-শুনে কাজ করবেন। এদেশ আমাদের সকলের। কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। আমরা সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্য চাই না। আমরা শান্তি চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখনও আমরা আশা করে বসে আছি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সেই প্রত্যশা রেখে আহ্বান জানাই, হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের পথ ছেড়ে আসুন। আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।’
‘এ নির্বাচন কাউকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ এবং কাউকে ক্ষমতায় বসানোর নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন হবে জনগণের রায় নিয়ে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্বাচন। আমাদের বয়স হয়েছে, আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সম্ভবনাময় দেশ রেখে যাই’— বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
আদালতের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এক মিথ্যা মামলায় আগামীকাল রায় হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক দল আমাদের চেয়ে বেশি ভীত হয়ে প্রতিবাদের অধিকার, মিছিলের অধিকার প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভীত হয়ে হীন পথ খুঁজে নিয়েছে এই অবৈধ সরকার। সারাদেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’
আদালত রায় দেওয়ার বহু আগেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, ‘আমার জেল হবে’। যেন বিচারক নয়, শাসক মহলই রায় ঠিক করে দিচ্ছে’’— বলেন খালেদা জিয়া।
নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যারা গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারে, যারা আন্দোলনের নামে বাসে আগুন, পেট্রোল পাম্পে আগুন, রেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছে, তারাই আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।’
‘আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না। সারাদেশে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা’— বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরুউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বিকেল ৫টায় খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন
আমি মাথা নত করব না: খালেদা
সারাবাংলা/এজেড