Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না কেউই


১৮ আগস্ট ২০১৯ ১৯:৫১

ঢাকা: আগামী ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে— মিয়ানমার সরকার সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানালেও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের অবস্থানও এক। তার কাছে সারাবাংলার এই প্রতিবেদক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একাধিকবার জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ রোববার (১৮ আগস্ট) পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলেন, ‘আমরা চাই, নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও পূর্ণ অধিকার নিয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। এ জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহজুড়ে (নেক্সট কাপল অব উইক) কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য বোঝাব। তারা যদি মিয়ানমারে ফেরত না যায়, তবে ভূমিসহ তাদের কোনো অধিকারই তারা পাবে না।’

ওই সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘যেকোনো সময়ই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।‘

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাস ও চরমপন্থাবিরোধী ব্যুরোর (কাউন্টার টেরিরিজম ও কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম) উপসমন্বয়ক (ডেপুটি কোঅরডিনেটর) জন টি গডফ্রে এখন ঢাকা সফর করছেন। তিনি রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন।

জন টি গডফ্রে ও পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে পররাষ্ট্র সচিব গডফ্রে’কে বলেন, ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। এ জন্য যা যা করণীয়, ঢাকার পক্ষ থেকে সবকিছুই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ আগস্ট সত্যি সত্যি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে কি না— সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। কেননা, প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে এখনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। আবার রোহিঙ্গারাও ফিরে যাওয়ার জন্য ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে না। এছাড়া যে রোহিঙ্গারা তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরত যাবে, তাদের বিষয়ে এখনো ভেরিফিকেশন রিপোর্ট (তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেওয়া যে তারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়) দেয়নি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো এইচটে গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) নেপিডো’তে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে জানান, আগামী ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। প্রথম ধাপে ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনা হবে।

এদিকে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গত ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।

রোহিঙ্গ সংকট সমাধানে নেপিডোর সঙ্গে সই হওয়া চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ ও ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফেরত নিবে মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চুক্তি সইয়ের পর প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছে মিয়ানমার। এর মধ্যে একবার রোহিঙ্গা প্রত্যবাসনের তারিখ ঠিকও হয়। তবে সেই প্রক্রিয়াও আলোর মুখ দেখেনি।

জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয় বলেও মত তাদের।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব। তবে প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি স্বভূমে।

ঢাকা-নেপিডো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর