৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নজর গ্রামীণ রূপান্তরে
১৯ আগস্ট ২০১৯ ১১:০৩
ঢাকা: সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’-এর অঙ্গীকার অনুযায়ী ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরত্ব পাচ্ছে গ্রামীণ রূপান্তর। অর্থাৎ শহরের সুবিধা পৌঁছানোর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বৈচিত্রায়ণ করা হবে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য এই পরিকল্পনার যে ধারণাপত্রটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সম্প্রতি ধারণাপত্রটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এটি খুব শিগগিরই প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে চূড়ান্ত করা হবে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান অঙ্গীকার ছিল ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’। অর্থাৎ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। চলমান গ্রামীণ রূপান্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গ্রামীণ আয়ের বৈচিত্র্যময় উৎস। রেমিট্যান্স এবং অকৃষি খাত থেকে প্রাপ্ত আয় এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তবুও জাতীয় শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনও কৃষিখাতের সঙ্গে জড়িত; যা গ্রামীণ আয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে জাতীয় উৎপাদন কাঠামোয় প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের অংশ হিসেবে কৃষির আপেক্ষিক অবদান কমবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি তৈরি করা হবে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে। এগুলো হচ্ছে- ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। ইতোমধ্যেই উভয়ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু আয়ের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। নগর ও গ্রামাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই আয় বেড়েছে। রেমিট্যান্সের ব্যাপক প্রবাহের পাশাপাশি বাণিজ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবাখাতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক গ্রামেই অ-কৃষি খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষি কর্মসংস্থান দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান আয় বাড়ার কারণে গ্রামীণ রূপান্তর চলমান রয়েছে। ’
ড. আলম আরও বলেন, ‘আধুনিক পরিবহন ও তথ্য প্রযুক্তিসেবা গ্রাম এবং নগরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে। রূপান্তরের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি টেকসই করা হবে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ’
এদিকে জিইডির ধারণা পত্রে বলা হয়েছে, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বৈচিত্র্যের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। তাই গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষিখাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভূমির উৎপাদনশীলতার ওপর আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এছাড়া খামারভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বেশি দামের পণ্য উৎপাদনের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ খুব ভালো করেছে এবং আরও ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় চাহিদা ও কৃষি জমির অপ্রতুলতার কারণে রফতানি বাজার প্রসারিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কৃষি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একক হাতিয়ার হতে পারবে না। শস্যখাতের বাইরে মৎস্যখাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। যা এখন কর্মসংস্থান, আয় ও রফতানির একটি অন্যতম বড় উৎস। এটি একটি কৌশলগত পরিবর্তন; যা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং বিশেষ করে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হবে।
ধারণা পত্রে বলা হয়েছে, গৃহপালিত পশু, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দেশীয় চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরবরাহের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে আরও কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিকল্পনায় বৈচিত্র্যময় চ্যালেঞ্জের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। অধিক উৎপাদনশীল খামার, কৃষি থেকে উচ্চ আয় কৃষককের প্রকৃত মজুরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তা দারিদ্র দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আয় বৈষম্য কমাতে সাহায্যে করবে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়, আন্তঃজেলা পরিবহন সংযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মান বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ উন্নয়নের এই মাধ্যমগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলেও ধারণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমার গ্রাম আমার শহর গ্রামীণ রূপান্তর