ট্রেনে উঠতে মই সার্ভিস, ১০/২০ টাকায় জয়পুরহাট টু ঢাকা!
১৯ আগস্ট ২০১৯ ১৮:৫২
জয়পুরহাট: ঈদের ছুটি শেষে নিজ এলাকা থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। বাস-লঞ্চের পাশাপাশি ট্রেনে ঢাকামুখি মানুষের ভিড় বাড়ছে। এই ভিড়ের সুযোগে টিকেট না কেটে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও পাঁচবিবি উপজেলার মানুষ। টিকেট না কেটেই তারা পৌঁছে যাচ্ছেন গন্তব্যে। তবে ১০/২০ টাকায় মইয়ের সাহায্যে কষ্ট করে ছাদে উঠতে পারলেই হয়। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এভাবে ট্রেন ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি রেল স্টেশন থেকে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা, আক্কেলপুর রেলস্টেশন থেকে নওগাঁর বদলগাছি, জয়পুরহাটের রেলস্টেশন থেকে পাঁচটি উপজেলার যাত্রীরা ছাড়াও ধামইরহাট উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ ট্রেনে ঢাকায় চলাচল করে থাকেন। ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত নীলসাগর এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেক্স ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য জয়পুরহাটসহ আক্কেলপুর,পাঁচবিব রেলস্টেশনগুলোতে স্টপেজ রয়েছে। জয়পুরহাটসহ আক্কেলপুর, পাঁচবিব রেল স্টেশনগুলোতে এই তিন ট্রেনের মধ্যে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার জন্য ৮০টি,একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৮৫ এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ৭৭টি সিট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে টিকেটের যা বরাদ্দ তার অর্ধেক টিকেট মোবাইল অ্যাপসে দেওয়া হয়।
এই তিন ট্রেনে ঈদের আগে গড়ে প্রতিদিন সিটসহ টিকেট বিক্রি হতো ৬০০ থেকে ৬৫০টি। ঈদের আগে গত ৫ আগস্ট তিন ট্রেনে সিটসহ টিকেট বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু উপায় না পেয়ে যাত্রীরা সিট ছাড়াও টিকেট কাটেন।
সরেজমিনে গত রোববার ও সোমবার আক্কেলপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৯ টা থেকেই অনেকেই স্টেশনে আসেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য। সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে স্টেশনের যাত্রী ছাউনি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর দুপুর হতে হতে পুরো স্টেশনের ঢাকা সহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীতে ভরে যায়। তবে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। স্টেশনের উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত প্রায় ১৫-২০ টি মই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় লোকজন। তারা ঢাকাগামী যাত্রীদের ১০ থেকে ২০ টাকা করে নিয়ে ছাদে উঠিয়ে দিচ্ছেন।
একই চিত্র জয়পুরহাটও পাঁচবিবি রেলস্টেশনে। যারা ছাদে উঠছেন তাদের বেশিরভাগই টিকেটবিহীন যাত্রী। ছাদে নারী পুরুষ উভয়েই উঠছেন নিজ কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার জন্য।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই তিনটি রেলস্টেশনে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলার এবং নওগাঁ জেলার বদলগাছি, ধামইরহাট উপজেলার যাত্রীরা এসে থাকেন। বিশেষ করে দুই ঈদে সব চেয়ে যাত্রীসংখ্যা বেশি থাকে। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা বিনা টিকেটের যাত্রীদের মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে ঢাকাগামী ট্রেনে ছাদে উঠিয়ে দিচ্ছেন।
আক্কেলপুর উপজেলা ভদ্রকালী গ্রামের ঢাকাগামী যাত্রী আলমগীর হোসেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের আহসান হাবীব জানান, তারা দুই জন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবার গ্রামে ঈদ করতে এসেছিলেন। অনেক কষ্টে টিকেট কেটেছেন তারা। স্টেশনে যত ভিড় ট্রেনে উঠে সিট পর্যন্ত পৌঁছানো দায়।
পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মরিয়ম আক্তার বলেন, ‘ট্রেনের বগিতে ও ছাদে যে ভিড় তাকে টিকেট কেটে কোনো লাভ নেই। এছাড়া সব টিকেট আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই ১০টাকা দিয়ে মই বেয়ে নিজ কর্মস্থল ঢাকায় যাচ্ছি।’
ঢাকাগামী যাত্রী পুরানাপৈল গ্রামের রুমা পারভীন বলেন, ‘আমি দ্রুতযান ট্রেনের টিকেট কেটে ভিড়ের কারণে উঠতে পারিনি। যারা বিনা টিকেটে যাচ্ছেন তাদের চেক করার কোনো লোক নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আক্কেলপুর রেল রেল স্টেশনে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘ঢাকাগামী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই ট্রেনের টিকিট কাটেন না।’
জয়পুরহাট রেল স্টেশনের মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্টেশনে ট্রেনের টিকেট বিক্রি আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। যে সব যাত্রী ঢাকায় গিয়েছেন তারা সকলেই টিকেট কেটেই গেছেন। ট্রেনের ছাদে মই দিয়ে উঠা বা ছাদে ভ্রমন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কাউকে চোখে পড়লে আমরা তাদের নিবৃত্ত করছি। চোখে পড়ামাত্রই বাধা দেওয়া হচ্ছে।’