Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দলে ভেড়াতে তৎপর ‘আল্লাহর দল’


১৯ আগস্ট ২০১৯ ২০:৩৯

ঢাকা: বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও নতুন করে ফের সক্রিয় হয়ে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’। তবে এবারে তারা নাম পরিবর্তন করে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল ‘আল্লাহর সরকার’ নামে। আর বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সদস্যদের যেন সশস্ত্র বা সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে না হয়, সে কারণে বিভিন্ন সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বা চাকরিচ্যুত সদস্যদেরই দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তৎপর তারা।

বিজ্ঞাপন

এই সংগঠনের চার সদস্যকে রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে গ্রেফতারের পর সোমবার (১৯ আগস্ট) কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ও র‌্যাব-৩-এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, ‘আল্লাহর সরকার’ নামে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল ‘আল্লাহর দল’। এই সংগঠনের ‘তারকা জঙ্গি’ (আমির) মেহেদী মতিনকে মুক্ত করার একটি পরিকল্পনা সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছিল দলের সদস্যরা। মেহেদী মতিনকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নেওয়ার সময় ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়ে তাকে মুক্ত করা হবে— এমন পরিকল্পনা ছিল ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের সদস্যদের।

আল্লাহর দলের গ্রেফতার চার সদস্য

এমরানুল হাসান বলেন, গ্রেফতার চার জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠতে গিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয় ও বাহিনীর অবকাঠামোর মতো করে নিজেদের সংগঠনের অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। সেই অনুযায়ী গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর নেতৃত্বের জন্য নায়ক, অধিনায়ক, উপঅধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক এবং সর্বোচ্চ পদকে ‘তারকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা।

বিভিন্ন জঙ্গি অপারেশনে যাদের পাঠানো হয়, তাদের সামরিক বা সশস্ত্র প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। যাদের এ প্রশিক্ষণ নেই, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, প্রশিক্ষণ বিষয়ক এসব ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন সামরিক, আধা-সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বা চাকরিচ্যুত সদস্যদের দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ‘আল্লাহর দল’। এ ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্যদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে তারা। জঙ্গি সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, চাকরিচ্যুত সেনা, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করাটা তুলনামূলকভাবে সহজ। এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে তারা সফল হতে পারেনি বলেই জানান এমরানুল হাসান।

বিজ্ঞাপন

‘আল্লাহর দলে’র সদস্য সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ার বিষয়ে র‌্যাব সিও বলেন, সংগঠনের সদস্য পদ সংগ্রহের জন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা চিরকুট ও লোক মারফত দূত পাঠায়। সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গি মতিন মেহেদীকে আমির মেনে বায়াত বা শপথ নিয়ে থাকে। তাছাড়া সংগঠনের যেসব সদস্য চাকরি করেন, তাদের মাসিক হারে চাঁদা দিতে হয়। ব্যবসায়ী সদস্যদের চাঁদা দিতে হয় মুনাফা হারে। চাঁদা ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া টাকা তারা নারী সদস্যদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। সব টাকাই জঙ্গিবাদে ব্যবহার করা হয়।

এই জঙ্গি সংগঠনের ইতিহাস তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ১৯৯৫ সালে জঙ্গি মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মতিন মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামে জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে। ২০০৪ সালের শেষের দিকে এটি জেএমবি‘র সঙ্গে একীভূত হয়ে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নেয়। জেএমবি নেতৃত্বশূন্য ও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে তারা আলাদা হয়ে যায়।

র‌্যাব সিও বলেন, পরে মতিন মেহেদী আলাদা হয়ে ‘আল্লাহর দল’কে আবার সক্রিয় করার চেষ্টা করে। সে ২০০৭ সালে গ্রেফতার হলে তারাও দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে তাকে আমির মেনেই এখনো চলছে সংগঠনটি। পাবনা থেকে শুরু করলেও এখন দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বেশ কিছু জেলায় তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। আর কৌশলগত কারণে তারা নাম পরিবর্তন করে ‘আল্লাহর সরকার’ হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

এর আগে, রোববার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার চার জন হলো— পাবনার মো. শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), গাইবান্ধার আবদুল আজিজ (৫০) এবং কুড়িগ্রামের মো. রশিদুল ইসলাম (২৮)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, হার্ডড্রাইভ ও বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এই জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা সম্পর্কে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এমরানুল হাসান।

আল্লাহর দল আল্লাহর সরকার জঙ্গি তৎপরতা জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ সংগঠন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর