শর্ত মানলে তবেই মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা
২১ আগস্ট ২০১৯ ১৪:৩১
কক্সবাজার: নিজ দেশে ফেরা নিয়ে আবারও সংশয় তৈরি হয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে। শর্ত মানলেই কেবল মিয়ানমারে ফিরবে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা – ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন কমিশন দল মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্বাক্ষর নেওয়ার কাজ শেষ করেছে।
জানা গেছে, ২২ আগষ্ট প্রথম দফায় ৩ হাজার ৪শ ৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সাক্ষ্য নিয়েছে ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গত দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে মিয়ানমারের তদন্ত টিম।
প্রত্যাবাসন নিয়ে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) শালবন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য নেওয়ার নির্ধারিত সময়েও ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে কেউ উপস্থিত হননি। পরে প্রত্যাবাসন কমিশন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কাছে যান । সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন ও সাক্ষ্য নেন তারা। এসময় তাদের বোঝানো হয় মিয়ানমার তাদের দাবী মেনে নিয়েছে। এদিন ২১ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গার মতামত নেয় ইউএনএইচসিআর। যদিও মতামত নেওয়া রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে সম্মত কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানাননি তারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সারাবাংলাকে এ বিষয়ে বলেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ২২ আগস্ট প্রথম দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। প্রথম দিন যাবে ৩শ রোহিঙ্গা। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নাফ নদী দিয়ে না হয়ে প্রত্যাবাসন হবে স্থল পথ দিয়ে।
তিনি আরও জানান, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বলছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়ে এবং সকল দাবি মেনে নিয়ে তাদের ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু এই কথাগুলো বোঝানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের এই কথা বোঝানো অব্যাহত রেখেছি। তারা হয়তো এক সময় বুঝে নিজ উদ্যোগে তাদের দেশে চলে যাবেন। এর আগে তাদের কোনো মতেই জোর করে পাঠানো যাবেনা।’
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের ছাড়পত্র দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার ৪শ ৫০ জন রোহিঙ্গার যাচাই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৮ দলের সদস্যরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত নিয়েছে। রোহিঙ্গারা বলছেন, দাবি-দাওয়া মানলেই তারা কেবল মিয়ানমারে ফিরবেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা না হলে তারা যাবেনা। এ কারণে তালিকাভুক্তদের অনেক রোহিঙ্গা গা ঢাকা দিয়েছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লিয়াকত মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সনদপত্র এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আমার মিয়ানমারে যাবনা। আগে এসব নিশ্চিত করা হোক তখন যাব।’
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছৈয়দ আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘মিয়ানমার আমার জন্মভূমি। আমি ওখানে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু অনিরাপদ হয়ে নয়। বারবার আমাদের ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আমরা ফিরব না। এভাবে হলে হবে না। দেখা যাক। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে নিজ দেশ মিয়ানমারেই ফিরে যাব।’