১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি, গ্রামীণ শক্তিকে এনবিআরের নোটিশ
২২ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৫৫
ঢাকা: গ্রামীণ পরিবারের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তি ১৬ লাখ ৫৬৮ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে জানতে পেরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই রাজস্ব আদায়ে দাবিনামাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট। নোটিশ পাওয়ার পর অবশ্য টনক নড়েছে। সময় চেয়ে কিস্তিতে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট শোধ করতে শুরু করেছে গ্রামীণ শক্তি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ছাড়িয়ে গ্রামীণ পরিবারের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ শক্তি। ১৯৯৬ সালে নিবন্ধিত হয়ে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি, তথা সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। ইডকলের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে সোলার হোম সিস্টেম, বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলার বিতরণ, বিপণন ও স্থাপনের কাজও করছে গ্রামীণ শক্তি।
এদিকে, ২০১৪ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে টি/আর কাবিটার কাজ বরাদ্দ করে। ওই চুক্তির অধীনে গ্রামীণ শক্তিও টি/আর কাবিটার কাজ বরাদ্দ পায়। ওই সময় থেকে গ্রামীণ শক্তি বরাদ্দ পাওয়া উপজেলায় টি/আর কাবিটার মাধ্যমে সোলার হোম সিস্টেম, উন্নত চুলা ও সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ করে আসছে।
এনবিআর বলছে, গ্রামীণ শক্তি ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কল্যাণপুর সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। সিএ ফার্মের নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের অডিট রিপোর্টে কর ফাঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে।
গ্রামীণ শক্তির নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসে মূসক কর্তন করেছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৯ টাকা, মূল্য সংযোজন কর (ট্রেড ভ্যাট, যা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্য বিক্রির সময় আদায় করা হয়) আদায় করেছে ৩৮ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৪ টাকা, স্থান ও স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত মূসক আদায় করেছে ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪২ টাকা।
পরের বছর ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসে মূসক কর্তন করেছে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৫ টাকা, মূল্য সংযোজন কর (ট্রেড ভ্যাট) আদায় করেছে ৫৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮ টাকা, স্থান ও স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত মূসক আদায় করেছে ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৬ টাকা।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসে মূসক কর্তন করেছে ১ কোটি ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৩০৩ টাকা, মূল্য সংযোজন কর (ট্রেড ভ্যাট) আদায় করেছে ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৪ টাকা, স্থান ও স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত মূসক আদায় করেছে ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা।
এরপর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ওই বছরের জুন পর্যন্ত গ্রামীণ শক্তি উৎসে মূসক কর্তন করেছে ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮২ টাকা, মূসক (ট্রেড ভ্যাট) আদায় করেছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ১২৭ টাকা, স্থান ও স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত মূসক আদায় করেছে ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৪ টাকা। আর ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে উৎসে মূসক কর্তৃন করেছে ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ২৭৭ টাকা, মূল্য সংযোজন কর (ট্রেড ভ্যাট) আদায় করেছে ২১ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৩ টাকা, স্থান ও স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত মূসক আদায় করেছে ৯৯ লাখ ৬ হাজার ২০৪ টাকা।
হিসাব অনুযায়ী ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত গ্রামীণ শক্তির মোট প্রদেয় মূসকের পরিমাণ ১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৭ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৪ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৮০৮ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ শক্তি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ২৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, যা ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এনবিআরের হিসাবে, ফাঁকি দেওয়া এই ১১ লাখ ৯৫ হাজার ২৯ টাকা মূসকের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদের পরিমাণ ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৩৯ টাকা। সবমিলিয়ে গ্রামীণ শক্তি ১৬ লাখ ৫৬৮ টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটনের পর এই ভ্যাট আদায়ে নোটিশ দেয় গ্রামীণ শক্তিকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়। পরে কিছু টাকাও পরিশোধ করেছে তারা। সময় নিয়ে বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে চেয়েছে তারা।
এ বিষয়ে জানতে গ্রামীণ শক্তির অফিসে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, গ্রামীণ শক্তি এরই মধ্যে সরকারি কোষাগারে ভ্যাট ফাঁকির কিছু টাকা জমা দিয়েছে। বাকি টাকা প্রতিষ্ঠানটি কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে। আশা করি এখন থেকে তারা সরকারের আইন মেনে ব্যবসা করবে।
এনবিআর গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ শক্তি গ্রামীণফোন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী