Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাইয়ের সাথে উপবৃত্তির টাকা আনতে গিয়েই রুপার মৃত্যু


২২ আগস্ট ২০১৯ ২০:১৭

ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁও গোড়ান এলাকার আলী আহমদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার রুপাকে উপবৃত্তির টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয় তার সৎভাই জোবায়ের হোসেন। এর পাঁচ ঘণ্টা পর তার মা জানতে পারেন, রুপা বেঁচে নেই। রুপাকে হত্যার অভিযোগে এরই মধ্যে ভাই জোবায়েরকে আটক করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ। তবে ঘটনার ১০ দিন পার হলেও রুপা হত্যার বিচার নিয়ে পুলিশ রহস্যজনক আচরণ করছে। পুলিশ কখনও বলছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসতে ১০ মাস সময় লাগবে আবার কখনও টাকা চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রুপার মা ছালেহা বেগম।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে রুপার পরিবার ও তার কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এদিন তারা প্রথমে আলী আহমদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এবং পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে রুপা হত্যার বিচার চান। হত্যায় সৎভাই জোবায়েরসহ আরও যারা জড়িত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের ফাঁসি চেয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

রুপার মা ছালেহা বেগম সারাবাংলাকে জানান, তার স্বামী তাজ উদ্দিন সচিবালয়ে গাড়িচালক ছিলেন। তার আগের একটি সংসার ছিল। সেই সংসারে জোবায়ের ও তার এক বোন আছে। বোনের বিয়ে হয়েছে এক পুলিশের সাথে। জোবায়েরের বয়স যখন আট বছর তখন তার মা মারা যায়। এরপর ছালেহা বেগমকে বিয়ে করেন তাজ উদ্দিন। ছালেহা জোবায়েরকে বড় করেছেন এবং বিয়েও দিয়েছেন। এখন তিনি স্ত্রী নিয়ে আলাদা বাসায় থাকেন। জোবায়ের মতিঝিলের সিটি সেন্টারে লিফট ম্যানের কাজ করত। এর আগে গত ১২ জুলাই মারা যান তাজ উদ্দিন। এরপর থেকেই বাবার জমানো টাকার ভাগ-ভাটোয়ার নিয়ে কথা বলতো জোবায়ের।

ছালেহা বেগম আরও জানান, তার দুই সন্তান। বড় মেয়ে রুপা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত আর ছোট ছেলে একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। গত বছর রুপা এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ায় উপবৃত্তির টাকা তুলত। এ মাসে টাকা তুলতে দেরি হচ্ছিল। তাই গত ১০ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জোবায়ের বাসায় এসে বলে, ‘রুপা চল তোকে উপবৃত্তির টাকা তুলে দেই। আমি টাকা তুলতে পারব, আমার লোক আছে। আজ না তুলতে পারলে অনেকদিন লেগে যেতে পারে। ’ভাইয়ের কথা মতো রুপা বের হয়ে যায়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জোবায়েরের মোবাইলে কল করলে তা রিসিভ করেন পুলিশের এক সদস্য। ওই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনারা থানায় চলে আসেন। আপনার মেয়ে মারা গেছে।’

বিজ্ঞাপন

রুপার মা বলেন, ‘পুলিশের কথা মতো থানায় গিয়ে দেখি, রুপার মৃতদেহ পড়ে আছে। এ সময় জোবায়েরকে হাজতখানায় বন্দি থাকতে দেখি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, রুপা ১৫ তলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের কাছে জানতে চাইলে এসআই আরিফ জানায়, জোবায়ের রুপার মরদেহ ওপর থেকে নীচে নামিয়ে আনার সময় পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। জোবায়ের পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে, সে রুপাকে গলাটিপে হত্যা করেছে। তবে কেন করেছে তা জানায়নি।’

ছালেহা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সবসময় বোরখা পরত। হাত ও পায়ে মোজা পরত। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় তার শরীরে বোরখা ও মোজা কিছুই ছিল না। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। এ থেকে বোঝা যায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে নাই। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে কেন হত্যা করল তা পুলিশ বের করার কথা। কিন্তু পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। জোবায়েরকে রিমান্ডেও নেয়নি। জোবায়েরের ভগ্নিপতি পুলিশে চাকরি করেন তাই হয়ত পুলিশও এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে হেয়ালি করছে।’

অন্যদিকে সিটি সেন্টারের সিসিটিভি ফুটেজে ছালেহা বেগম দেখেছেন যে, জোবায়েরসহ আরও দুজন রুপাকে নিয়ে একটি রুমে প্রবেশ করছে। এর প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর এলোমেলো জামা ও সালোয়ার পরিহিত অবস্থায় রুপাকে কোলে করে নিয়ে বের হয়ে আসছেন জোবায়ের। পুলিশ এই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েও টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ করেন রুপার মার। এছাড়া রুপার মা জানান, একদিন তদন্ত কর্মকর্তা এসে টাকা চেয়েছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওই পুলিশ সদস্য বলেছেন, ‘টাকা দিতেই হবে। সামান্য হলেও দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ নাছিমা পারভিন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল রুপা। চতুর্থ শ্রেণিতে রুপা ভর্তি হয়েছিল। এরপর সবসময় তার রোল নম্বর ১ ছিল। পড়ালেখার জন্য তার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান কোনো টাকা নিতো না। তার মা অন্যের বাসায় কাজ করে দুই ভাইবোনকে পড়াচ্ছেন। তার মৃত্যুতে আমরাও হতবিহ্বল। আমরা এই হত্যার প্রকৃত তদন্ত শেষে উপযুক্ত শাস্তি চাই। ‘

রুপার সহপাঠী হোমায়রা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রুপাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়না তদন্তের পর এ তথ্য জেনেছি। ময়না তদন্তের সময় আমরা মর্গে উপস্থিত ছিলাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, ‘এই মামলার আসামি জোবায়ের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। মামলার তদন্ত কাজ চলছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এলে বাকি তদন্ত কাজ শেষ হবে। জোবায়ের হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ’

‘তবে কেন হত্যা করেছেন, সেটি স্বীকার করেছেন কি না?’- জানতে চাইলে এসআই আরিফ বলেন, ‘এতো কিছু বলতে পারব না। ’

উপবৃত্তির টাকা রুপা হত্যাকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর