Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুড়ছে অ্যামাজন, বাড়ছে উদ্বেগ


২৩ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৩৫ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০১৯ ১৬:২০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একের পর এক দাবানলে পুড়ে ছাই হচ্ছে অ্যামাজন। আর তাতে পৃথিবী হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে প্রতিনিয়ত সতর্ক করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। দেরিতে হলেও এই সংকট নিয়ে মুখ খুলছেন বিশ্বনেতারাও।

আরও পড়ুন- ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ পুড়ছে

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক টুইট বার্তায় এ সংকটকে ‘আন্তর্জাতিক বিপদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোন। এক টুইটে তিনি লিখেন, ‘আমাদের আশ্রয়স্থল পুড়ছে। আক্ষরিক অর্থেই। পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত অ্যামাজন ২০ ভাগ অক্সিজেন উৎপাদন করে। এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। দুই দিন পর শুরু হতে যাওয়া জি-৭ সম্মেলনে এটাই আমাদের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

তবে মাক্রোনের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন খোদ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমন দাবিকে তিনি ঔপনিবেশিক চিন্তা বলে অভিহত করেছেন। এমানুয়েল মাক্রোনের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি টুইটে লিখেন, ‘মাক্রোনের পরামর্শ ঔপনিবেশিক চিন্তার ফল, কারণ ব্রাজিল নিজে জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে না। তাই ব্রাজিলের সমস্যা নিয়ে সেখানে আলোচনার প্রস্তাব ঠিক নয়। একুশ শতকে এমন ঔপেনিবেশিক চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্য নয়।’ মাক্রোনের এমন দাবিকে তিনি দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন- অ্যামাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণের সাধ্য নেই ব্রাজিলের

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্তো আর্জুও টুইটারের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এমন আহ্বানকে ‘বর্বর অন্যায়’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘যখন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসে দেশটিকে সুসংগঠিত করে গড়ে তুলছেন, তখনই এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ মাক্রোনের আহ্বানকে পরিবেশ রক্ষার নামে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয়দের অস্ত্রাগারের শেষ অস্ত্রটি হলো পরিবেশ রক্ষার নামে আগ্রাসন।’

অ্যামাজন নিয়ে কে কী বলছেন?

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সরকারদলীয় নেতারা এমানুয়েল মাক্রোনের টুইটের প্রতিবাদ জানালেও অ্যামাজন নিয়ে নিরব নন বিশ্বের বিভিন্ন নেতা ও সেলিব্রেটিরা।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট এমনিতেই বড় চিন্তার বিষয়। এর মধ্যে অ্যামাজন যেভাবে পুড়ছে তাতে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদনের উৎস এমন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি গভীর উদ্বিগ্ন। এটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই।’

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ জন্য দায়ী করছেন ব্রাজিল সরকারকেই। তিনি এক টুইটে লিখেন, ‘অ্যামাজনে অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী আর কেউ নয়, বরং ব্রাজিল সরকারই দায়ী।’

নিরবে বসে নেই বিশ্ব সেলিব্রেটিরাও। পপ তারকা ম্যাডোনা এক টুইটে লিখেন, ‘অ্যামাজনের উদ্ভিদ ও অধিবাসীরা এই জঙ্গলকে পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ করেছে। সেই জঙ্গলটি পুড়ছে। প্রেসিডেন্ট বলসেনোরো প্লিজ…।’

ফুটবল মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এক টুইটে লিখেন, ‘অ্যামাজন জঙ্গল পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন তৈরি করে। এই জঙ্গল তিন সপ্তাহ ধরে পুড়ছে।  পৃথিবীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’

যে কারণে দায়ী করা হচ্ছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে

এ বছরের জানুয়ারিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসেনোরো ক্ষমতায় আসার পর অ্যামাজন জঙ্গলে ৭৫ হাজারেরও বেশিবার দাবানলের ঘটনা ঘটে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৪ শতাংশ বেশি।

গত জুলাই থেকে জঙ্গল উজাড়ের মাত্রা বেড়ে যায়। পরিবেশবাদী ও সংরক্ষণবাদীরা দাবানলে অ্যামাজনের দ্রুত উজাড় হওয়ার জন্য এ বছরের শুরু থেকেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে দায়ী করছেন। তাদের দাবি, দেশটির প্রেসিডেন্ট পরিবেশ সংরক্ষণের চেয়ে উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নীতি গ্রহণ করার ফলেই অ্যামাজনের এমন পরিণতি।

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য মতে, ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পরই দাবানলের ঘটনা বেড়ে গেছে অ্যামাজনে।

ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলে শুষ্ক মৌসুমে দাবানলের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই জঙ্গলটির বিভিন্ন অংশে দাবানলের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এর বাইরেও আবাদি জমি বের করতে বা গবাদি পশুর খামার গড়ে তুলতে ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুন দিয়ে থাকেন কৃষকরা। এ ধরনের চেষ্টাকে ব্রাজিলের বিগত সরকারগুলো কঠোর হাতে দমন করলেও এবার তা হচ্ছে না বলে দাবি পরিবেশবাদীদের। তাদের দাবি, আগের সরকারগুলোর পরিবেশ রক্ষা নীতির ঠিক উল্টোরথে চলছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

দেশটির মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান আলবের্তো সেজার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আগুন লাগিয়ে কৃত্রিম দাবানল সৃষ্টির জন্য শুষ্ক মৌসুমকে বেছে নেওয়া হয়। এ মৌসুমে দুর্ঘটনাবশত বা ইচ্ছাকৃত উভয়ভাবেই আগুন লাগে অ্যামাজনে।

অ্যামাজন পুড়ছে অ্যামাজনে দাবানল ব্রাজিলের অ্যামাজন