বন্যায় বীজতলা নষ্ট, আমনের চারা সংকটে দিশেহারা কৃষক
২৪ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১৪
কুড়িগ্রাম: প্রবল বন্যা শেষে পানি নেমে গেছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। পানি নেমে যেতেই আমন চাষে নেমে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। তবে প্রলম্বিত বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমনের চারা নিয়ে সংকটে পড়েছেন তারা। অন্য জেলা থেকে চারা সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও সেই চারার দাম লাগামহীন। ফলে অনেক কৃষকেই এখনো আমনের চারা সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে অনাবাদি পড়ে আছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। তবে চারা সংকটের কথা স্বীকার করছে না কৃষি বিভাগ। পড়ে থাকা জমিতে আগাম রবি শস্য চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছে তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারের বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার আমন মৌসুমে চারা লাগানোর শেষ সময়ে এসে নতুন বীজতলা তৈরির চেষ্টা করলেও সময় স্বল্পতার কারণে সেটাও সম্ভব হয়ে উঠছে না।
এ পরিস্থিতিতে কিছু কিছু কৃষক চড়া মূল্যে জেলার বাইরে থেকে আমনের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করছেন। তবে বাড়তি দাম দিয়ে সেই চারা কেনার সামর্থ্য নেই বলেই জানান বেশিরভাগ কৃষক। তাছাড়া চারার দাম বেশি হলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কৃত্রিম সেচের খরচও বাড়তি বলে জানান তারা। এ পরিস্থিতিতে আমন চাষে নামতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। চেয়ে আছেন সরকারি প্রণোদনার দিকে।
বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে আমন ধান লাগানোর উৎকৃষ্ট সময় শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে। প্রলম্বিত বন্যার কারণে চাষ শুরু করতে পারেননি তিনি। বন্যায় নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের বীজতলা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাদ্র মাসে এসেও আমনের চাষ শুরু করতে পারছেন না তারা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সরদার পাড়ার কৃষক মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছর তিন একর জমিতে আমানের আবাদ করি। সে অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু সে বীজতলা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন করে বীজতলা তৈরি করেছি। তা দিয়ে হয়তো একএকর জমিতে চারা লাগানো সম্ভব। বাকি দুই একর জমি পড়েই থাকবে।
মকবুল আরও বলেন, জমিতে সেচ দিয়ে চারা লাগাতে হবে। এরপর সার, কীটনাশক তো আছেই। এতেই অনেক খরচ পড়ে যাবে। তার ওপর বেশি দামে চারা কিনতে হলে ধানের যে খরচ হবে, তাতে চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাতে তো কোনো টাকা-পয়সাও নেই।
একই এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন ও ফারুক জানান, আমরা গরিব মানুষ। চারা কিনে আনার মতো কোনো টাকা নেই। এজন্য জমি পড়ে আছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারা বেশি দামে বাইরের জেলা থেকে চারা কিনে এনে জমিতে লাগাচ্ছে। সরকার যদি আমাদের কোনো সহযোগিতা না করে, তাহলে বাঁচার কোনো উপায় নাই।
নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ডাকনির পাড় গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, আমি চার একর জমিতে আমান লাগাই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় বীজতলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নামার পর বীজতলা করেছিলাম। কিন্তু তাতে অল্প কিছু চারা হয়েছে। সেগুলো লাগানোর মতো বয়সও হয়নি। অথচ আমনের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তবু হয়তো চারার বয়স হলে দেরিতে হলেও লাগাব, তাতে ফলন খারাপ হলেও কিছু করার নেই।
তবে তারা সংকটের কথা অস্বীকার করলেন কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসালণ অধিদফতরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় এ বছর প্রলম্বিত বন্যার কারণে নীচু অঞ্চলে আমন রোপন বিলম্বিত হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা নিজেরাই বীজতলা তৈরি করেছে। কেউ কেউ পাশের এলাকা থেকেও চারা সংগ্রহ করে আমন রোপণ করেছে। আমন রোপণের কাজ পুরোদমে চলছে।
ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘এবারে আমাদের কুড়িগ্রাম জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হাজার হেক্টর জমি। আমরা সেটা অর্জন করতে পারব। পাশাপাশি যেসব নিচু এলাকায় আমন রোপণ করা সম্ভব হবে না এবং জমি পড়ে থাকবে, সেসব এলাকার কৃষকদের আগাম রবি শস্য চাষাবাদ করার জন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’ চারা সংকটের কারণে কী পরিমাণ জমি অনাবাদি পড়ে আছে, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
জরুরিভিত্তিতে সরকারিভাবে আমনের চারা কৃষকদের মধ্যে সরবরাহের পাশাপাশি কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা না করা হলে চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকরা।