মাদকবিরোধী কর্মী এখন ইয়াবা মামলার আসামি!
২৪ আগস্ট ২০১৯ ১৬:০৮
রাজবাড়ী: রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামে ইলিয়াছ শেখ (৩২) নামে এক ড্রেজার চালককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন ইলিয়াছ শেখের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
ইলিয়াছ শেখ শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামের সহিদ শেখের ছেলে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইলিয়াছ সেখ মাটি কাটা ড্রেজার চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আমিন, জসিম ও রুবেলসহ ৪-৫ জনকে পুলিশ ও র্যাবের মাধ্যমে ধরিয়ে দেন। এসব মাদক ব্যবসায়ী জামিনে বের হয়ে এসে বিভিন্ন সময়ে তাকে ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।
এ ঘটনায় ইলিয়াছ গত ১৭ আগস্ট খানখানাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। এ সব ব্যাপারে মাদক ব্যবসায়ীরা ইলিয়াছের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে বসন্তপুর স্টেশন বাজারে রেল ক্রসিং এলাকায় দর্জির দোকানের সামনে থেকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা ইলিয়াছের দেহ তল্লাশি করে কিছু না পেলেও সেখানে থাকা তার মোটর সাইকেলের মিটারের তারের সঙ্গে কসটেপ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় একটি প্যাকেট জব্দ করে। এরপর মাদকদ্রব্যের সদস্যরা ওই প্যাকেটে ইয়াবা আছে বলে ইলিয়াছকে আটক নিয়ে আসে। পরে ১২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মাদক আইনে মামলা করে ইলিয়াছকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরিবারের লোকজনের ধারণা উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই ইলিয়াছের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলে ইয়াবা বেঁধে রাখে। পরে সন্ধ্যার পর বসন্তপুর স্টেশন বাজারে রেল ক্রসিং এর সামনে দর্জির দোকানের সামনে থেকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা মোটর সাইকেল থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার ও ইলিয়াছকে আটক করে।
মামলার এক নম্বর সাক্ষী বসন্তপুর বাজারের টেইলার্স দোকানি রেজাউল প্রামাণিক বলেন, সন্ধ্যার পর ইলিয়াস আমার দোকানে একটি কাজের জন্য আসেন। এ সময় তিনি তার মোটর সাইকেলটি আমার দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে দোকানের ভেতর কথা বলছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন লোক এসে ইলিয়াসকে ধরে পুরো শরীর তল্লাশি করে। কিন্তু তারা কিছু পায় না। পরে ইলিয়াসের মোটর সাইকেলের মাইল মিটারের তারের সঙ্গে টেপ দিয়ে পেচানো অবস্থায় তারা একটি প্যাকেট উদ্ধার করে। এরপর তারা একটি সাদা কাগজে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি ভয়ে কাগজে স্বাক্ষর করে দেই। ইলিয়াসের মোটরসাইকেলে থেকে যে প্যাকেট জব্দ করেছে সেই প্যাকেটে কী আছে তা তারা আমাকে দেখায়নি।
আলামত জব্দের দুই নম্বর ও তিন নম্বর সাক্ষী ওষুধের দোকানি আবুল কালাম আজাদ ও ফার্নিচার দোকানি হাকাম শেখ জানান, ইলিয়াসকে যখন তল্লাশি করা হয় তখন আমরা বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইলিয়াসের কাছে তারা কোনো ইয়াবা বা প্যাকেট পায়নি। কিন্তু ইলিয়াসের মোটর সাইকেলের মাইল মিটারের তারের সঙ্গে টেপ দিঁয়ে পেচানো অবস্থায় তারা একটি প্যাকেট জব্দ করে। প্যাকেটের ভেতর কী আছে তা তারা তাদের দেখায়নি। আমাদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য তারা জোরাজুরি করলে তা স্বাক্ষর করেন।
তারা জানান, ইলিয়াস একজন ভালো ছেলে। তিনি মাটি কাটা ড্রেজার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ধারণা সে ষড়যন্ত্রের শিকার।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘ইলিয়াছ শেখ এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। এর আগেও বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সব তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্প সূত্র জানায়, গত ঈদুল আযহার কয়েকদিন আগেও এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করার বিষয়ে ইলিয়াছ তাদের সহযোগিতা করছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড পরিদর্শক ধনঞ্জয় জানান, ওইদিন উপ-পরিদর্শক এনামুল হকের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী থানার ওসি আমাকে অবহিত করেছেন। আমি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কর্মস্থলের বাইরে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান করতে পারিনি। তবে এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’
উপ-পরিদর্শক এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইয়াবাগুলো মোটর সাইকেল থেকে নয়, ইলিয়াছের দেহ তল্লাশি করে জব্দ করা হয়েছে।’