পুলিশের ভুলে কারাগারে নিরাপরাধ
২৫ আগস্ট ২০১৯ ২২:২৩
ঢাকা: আসামি না হলেও শুধু মাত্র নামের মিল থাকায় যৌতুক আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন এক নিরাপরাধ। আর এ মামলার আসল আসামি বর্তমানে জর্ডান রয়েছে বলে জানা গেছে। নিরাপরাধ ওই ব্যক্তি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার উদিয়ারপাড়ার সিরাজুল হকের ছেলে মো. জামসু মিয়া (৩৭)। গত ৮ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
রোববার (২৫ আগস্ট) ভিকটিম মো. জামসু মিয়ার উপস্থিতিতে ঢাকা সিএমএম আদালতে শুনানি হলেও তার কারামুক্তি হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ জুন ঢাকা সিএমএম আদালতে মানহুরা খাতুন (২৬) তার স্বামী কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. জামসু মিয়ার (সাগর) বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে সিআর ২১৯/২০১৫ মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলায় আসামি গত ১ মার্চ থেকে পলাতক।
ওই মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আসামির অনুপস্থিতিতে ১ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের রায় প্রদান করেন। রায়ের সময় আসামি পলাতক থাকায় আদালত আসামির স্থায়ী ঠিকানার ইটনা থানায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে একটি সাজা পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
চলতি বছরের ২৫ জুলাই ইটনা থানায় ওই পরোয়ানা পৌছানোর পর ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামান ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামছুল হাবিবকে পরোয়ানা তামিলের জন্য দায়িত্ব দেন। গত ৭ আগস্ট এসআই শামছুল হাবিব নামের মিলে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার সিরাজুল হকের ছেলে মো. জামসু মিয়াকে গ্রেফতার করে পরদিন তাকে কিশোরগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠান।
এরপর গত ২২ আগস্ট রায় প্রদানকারী আদালতে ভুক্তভোগী মো. জামসু মিয়ার আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ভুলভাবে আসামি গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে জামিনের আবেদন করেন। ওইদিন মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন বিষয়টি অবগত হয়ে আসামির উপস্থিতিতে ২৫ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী আজ কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে জামসু মিয়াকে রায় প্রদানকারী আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর শুনানিতে আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ভুল আসামি গ্রেফতাররের বিষয়টি উল্লেখ করে মো. জামসু মিয়ার জামিনের আদেশ প্রার্থনা করেন। শুনানির ওই সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. জামসু মিয়ার (সাগর) আইনজীবী এসএম গোলাম ছোবহান শেখুনও বিষয়টি সত্য বলে আদালতকে জানান।
কিন্তু বিচারক মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং গেফতারকৃত আসামি ভিন্ন ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে জামিন নামঞ্জুর করেন।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতারের পর পুলিশকে ভুলের বিষয়টি বলা হলেও পুলিশ তাকে ছাড়েনি বা তদন্ত করে দেখেনি। এ কারণেই একজন নিরাপরাধ মানুষ ৮ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। মামলার প্রকৃত আসামি বর্তমানে জর্ডান রয়েছে।’
অপরদিকে প্রকৃত আসামি মো. জামসু মিয়ার (সাগর) আইনজীবী এস এম গোলাম ছোবহান শেখুন বলেন, ‘আমার মামলার আসামিকে আমি চিনি। যে আসামিকে পুলিশ ধরে এনেছে সে ওই আসামি নয়। আমি শুনানির সময়ও আদালতকে একথা বলেছি।’