এবারই কোনো হত্যাকাণ্ডে প্রজেক্টরে দেখানো হবে আসামিদের সম্পৃক্ততা
২৫ আগস্ট ২০১৯ ২২:৫৩
ফেনী: ফেনীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আসামিদের সম্পৃক্ততার অডিও এবং নুসরাত দেওয়া জবানবন্দির ভিডিও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে আদালতে বিচারকের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথম মামলা; যেখানে কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু।
রোববার (২৫ আগস্ট) নুসরাত হত্যা মামলার ৩৬তম দিবসের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলমের সাক্ষ্য উপস্থাপন এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তার জবানবন্দি শেষে নুসরাত হত্যা মামলায় আসামিদের সম্পৃক্ততার অডিও এবং নুসরাত দেওয়া জবানবন্দি ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদালতে পেশ করবেন তিনি।
এদিন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদের আদালতে এই মামলার সর্বশেষ ৯২ নম্বর সাক্ষী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ফেনী শাখার পরিদর্শক মো. শাহ আলম রোববার আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া নুসরাতের মৃত্যু-সনদ প্রদানকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার ওবায়দুল ইসলামও সাক্ষ্য দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলমের জবানবন্দি শেষে নুসরাত হত্যা মামলার আগে-পরে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে যে উল্লাস করেছে এবং তাদের কথোপকথন ও নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বিচারককে দেখানোর অনুমতি চাইলে বিচারক তা গ্রহণ করেছেন এবং প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করবেন।
শাহজাহান সাজু আরও বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্য কার্যক্রম একদম শেষের দিকে। এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অভিযোগপত্র প্রদানকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ফেনী শাখার পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সাক্ষ্য শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হবে। এ মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার এজহারে ৯২ জন সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে ৯২ জনকে সাক্ষীর জন্য আদালতে ডাকা হয়। ৪ জন আদালতে সশরীরে উপস্থিত না হলেও তারা ডকুমেন্টারি সাক্ষী হওয়ার কারণে আদালতে উপস্থিত না হলেও তারা সাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন। কারণ তাদের পক্ষে আদালতে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলার সাক্ষ্য আইনের বিধান অমান্য করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিডিও দেখাবে। এসব কিছু একতরফাভাবে করছে। আসামিদেরকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য দুরভিসন্ধিমূলক-ভাবে এসব কাজ করছে।
এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও বাবা মাওলানা একেএম মুসাসহ ৯১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।