দু’দফা বন্যা, গাইবান্ধায় আমন চাষে চারা সংকটে চাষিরা
২৬ আগস্ট ২০১৯ ০৮:০৬
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার বন্যা কবলিত বেশিরভাগ এলাকায় এখনো ফসলের মাঠে হাঁটু পানি। তবে যেসব এলাকার জমি থেকে পানি সরে গেছে সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে আমন চারার সংকট। ফলে ফসলের মাঠ ফাঁকা পড়ে আছে।
জেলার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকা ও বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমনের চারার দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। আমন চারা অনেক কৃষকের নাগালের বাইরে রয়েছে। অপরদিকে ধানের বাজার দর কম থাকায় বেশি বিনিয়োগ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।
চলতি বছর দু’দফা বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল জেলার ২ হাজার ৮শত ৮১ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা। ১৫ থেকে ২০ দিন বীজতলা পানিতে ডুবে থাকায় সেসব পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আমন ধান চাষে যখন মাঠে নামেন কৃষকরা তখনই দেখা দিয়েছে চারার সংকট। তাই তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলে চাষিরা ছুটছেন আমনের চারা সংগ্রহে। হাট-বাজারগুলোতে কিছু আমনের চারা পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
সাঘাটার তেলিয়ান সাহারভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ভাল ফলনের আশায় উন্নত জাতের বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু ভালো ফলন তো দূরের কথা বন্যায় তার সম্পূর্ণ বীজতলা ডুবে আমনের চারা পচে গেছে।
ভালো বীজ সংগ্রহ করতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই হাটে গিয়ে তার মাথায় হাত। ১ পোন (৮০ আটি) আমনের চাড়ার দাম ১২শ থেকে ২ হাজার টাকা। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবার আমনের বীজের যে দাম তাতে ৩ মণ ধান বিক্রি করে ১ পোন বীজ কিনতে হচ্ছে। ১ মণ ধানের দাম ৫শ টাকা। ২ হাজার টাকায় ভাল জাতের ১ পোন বা ৮০ তার বীজের চারা নিতে গেলে ৪ মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।’
তার পরেও কিছু কিছু আমনের চারা তুলনামূলক কম দাম-৫শ থেকে ৭শ টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু সেই চারা লাগানোর পরে ভালো ফলনের সম্ভাবনা নেই। সে কারণে জয়পুরহাট ও দিনাজপুর থেকে এই চারাগুলো আনা হয়েছে। এগুলো কোন জাতের চারা তা সঠিকভাবে বিক্রেতারাও জানেন না। এসব কম দামের চারা লাগানোর ফলে ফলন ভালো নাও হতে পারে সেই সন্দেহে বেশি দামের চারা কিনতেই বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও এখনো চারা দেওয়া শুরু করেনি কৃষি বিভাগ ।
ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামরী গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, এবারের বন্যায় ৫ বিঘা জমির করলাসহ বিভিন্ন সবজি ফসল তলিয়ে যায়। কয়েকদিন পানির নিচে ফসল থাকার পরে সব ফসল পচে যাওয়ায় তার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বুরুঙ্গী গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, এবছর বন্যায় তার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তা কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
কয়েক একর জমিতে টানা ৬ মাসের পরিশ্রমে পটল, করলা, শশাসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেছেন। যে সময় প্রতি সপ্তাহে সবজি বিক্রি করে ১০ হাজার করে টাকা পাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় ভয়াবহ বন্যায় তার কপাল পুড়েছে। এখনো পুরো ক্ষেত বন্যায় বিধ্বস্ত। আজও কোনো সরকারি কৃষি কর্মকর্তা তার খোঁজ নেননি।
পুটিমারী গ্রামের সফল কৃষক আমির হোসেন। ধান চাষে নয় সবজি চাষে মিলেছে তার সফলতা। সবজি বিক্রি করেই তিনি শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু সেই সফল কৃষকের স্বপ্ন এবারের বন্যায় ভেঙে গেছে। তার প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-এর উপ-পরিচালক এস এম ফেরদৌস জানান, জেলার সাত উপজেলায় বন্যায় এবার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জেলার সাত উপজেলার ১শ জমিতে কমিউনিটি বীজ তলা তৈরি করেছি। এই ১শ’টি বীজতলা থেকে ৬ হাজার কৃষককে প্রতি-বিঘার জন্য চারা বিতরণ করা হবে।
এস এম ফেরদৌস আরও জানান, চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য ২৪শ কেজি অর্থাৎ ৪শ কৃষক-প্রত্যককে ৬ কেজি করে গাঞ্জিয়া বীজ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। যাতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এবার কৃষি বিভাগ ১ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯ হাজার মেট্রিক টন।