এজাহারভুক্ত আসামিদের খোঁজ নেই, মিন্নিকে নিয়েই ব্যস্ত পুলিশ
২৬ আগস্ট ২০১৯ ০৯:২১
বরগুনা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখনও গ্রেফতার হয়নি এজাহারভুক্ত ৪ আসামি। এছাড়া বন্ড গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ও এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কয়েকজনকে সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করা হলেও তাদের আইনের আওতায় আনেনি পুলিশ। হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর তাকে ঘিরেই ছিল পুলিশের সব তৎপরতা। মিন্নিকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই পুলিশের ‘কার্যসিদ্ধি’ মনোভাবের কারণে অন্য আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়টি অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে।
এর আগে, গত ২৭ জুন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফের বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারভুক্ত ৫নং আসামি মুছা বন্ড, ৭নং আসামি মুহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮নং আসামি রায়হান ও ১০নং আসামি মোহাম্মদ রিফাত হাওলাদার এখনও রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত নাইম ও বন্ড গ্রুপের অন্য কয়েকজনকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনাক্ত করার পরও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা শুরু থেকেই অব্যাহত ছিল। বাকিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৬ জুলাই সকালে বাসা থেকে আসামি শনাক্তের জন্য ডেকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড ও স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি নেয় পুলিশ। মিন্নির জামিনের আবেদনের বিপরীতে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্যই পুলিশের আগ্রহ ছিল বেশি। যে কারণে রিফাত হত্যার অন্যতম আসামি বন্দুকযদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগমকে গভীর রাতে নয়নের মামা বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয় বরগুনার বাসায়। বাড়িতে নয়নের কক্ষে মিন্নির যাতায়াত সংক্রান্ত আলামত সংগ্রহ করা ও সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে সরবরাহ করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, তড়িঘরি করে চার্জশিট দেওয়ার প্রস্ততি সম্পন্ন করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ঈদের আগেই এই মামলার চার্জশিট দেওয়ার মনোভাব ছিল পুলিশের। কিন্ত উচ্চ আদালত মামলার ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়ার পরপরই পুলিশ এখন সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, উচ্চ আদালত থেকে এ মামলার নথিপত্র তলব ও পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আদালতের ব্যাখ্যা চাওয়ার পর চার্জশিট তৈরির ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক রয়েছে পুলিশ। মামলায় মিন্নিকে হুকুমের নাকি প্রধান আসামি করা হবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে নেওয়া হচ্ছে আইনি পরামর্শও। তবে হাইকোর্টে রুল জারি ও তলবের আগে মিন্নিকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছিল বলেও জানা গেছে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিপত্রসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন। আয়শা সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার আগে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন গত ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। সে বিষয়েও এসপির লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন আদালত।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ন কবির ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালতে মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানও।
জানা গেছে, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্র তৈরির ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের মতামত নিতে বেশ কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। তারা বরগুনায় ফিরে যখন অভিযোগপত্র প্রস্তুতের উদ্যোগ শুরু করেন, তখনই উচ্চ আদালত রুল দেন।
আয়শার হয়ে আইনি সহায়তা দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না এই মামলা ও মিন্নিকে নিয়ে বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিভিন্ন চাপে মিন্নি ও তার পরিবার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ছিল। স্থানীয় আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও ছিলেন না। এই অবস্থায় ঢাকা ও বরিশাল থেকে আইনজীবী পাঠিয়ে আয়শাকে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগপত্রে মিন্নিকে আসামি করার ব্যাপারে জেড আই খান বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকাকে আসামি করা হলে মামলার মান নষ্ট হয়ে যাবে।’
মিন্নির পক্ষের বরগুনার আইনজীবী আসলাম হোসেন জানান, মামলায় আয়শাকে আসামি করার জন্য পুলিশ তাড়াহুড়ো করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকটা সংযত।
এদিকে মিন্নিকে চার্জশিটে আসামি করা হবে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, তদন্তে যেভাবে এসেছে সেভাবেই মামলার চার্জশিটে তাকে আসামি করা হবে।