অধ্যাপক সিতারা পারভীন পুরস্কার পেলেন ঢাবির ১০ শিক্ষার্থী
২৬ আগস্ট ২০১৯ ১৪:১৭
ঢাবি: অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে… নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে… এই সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর হয় বক্তৃতা। অতঃপর বৃত্তির অর্থ হাতে তুলে দেওয়া। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েও ভাস্বর হয়ে উঠলেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. সিতারা পারভীন। তার স্মৃতির কথা উচ্চারিত হলো বক্তাদের কণ্ঠে। অনুষ্ঠানের শিরোনামেও তারই কথা- অধ্যাপক সিতারা পারভীন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। কারণ এটি ছিলো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রয়াত এই অধ্যাপকের নামে প্রচলিত বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান।
তবে মূল বক্তব্য, আলোচনা তথা প্রশ্নোত্তর পর্ব ঘুরপাক খেয়েছে জেনোসাইড শব্দটিকে ঘিরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার ‘হোয়াই জেনোসাইড?’ শিরোনামে লেখা মূল নিবন্ধ এতে উপস্থাপন করেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধাপক ড. কাবেরী গায়েন ছিলেন সভা প্রধান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮ সালের বিএসএস (সম্মান) পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করায় ‘অধ্যাপক সিতারা পারভীন পুরস্কার’ পেয়েছেন যে ১০ শিক্ষার্থী, তাদের হাতে বৃত্তির টাকা তুলে দেওয়াই ছিলো অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বিভাগে অনার্স পর্যায়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ধারী শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তি পেয়েছেন। এ বছর যারা বৃত্তি পেলেন তারা হচ্ছেন- মেহজাবিন বশির তুলি, শারমিন জাহান জুহা, ফায়েজ আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক সোহেল, তন্ময় সাহা জয়, নম্রতা তালুকদার অর্পা, তাহমিনা আক্তার জেনি, সুমাইয়া তানিম, শামীমা নাসরিন ও মেহেরুন নাহার মেঘলা।
অধ্যাপক সিতারা পারভীনের স্বামী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও বিভাগীয় শিক্ষকরা ও সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বৃত্তির নির্ধারিত অর্থের বাইরে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয় অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলীর পক্ষ থেকে।
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার মূল বক্তৃতায় জেনোসাইডকে সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শব্দটিকে ঘিরেই কিছুটা ভুল ধারণা রয়েছে। জেনোসাইডকে বাংলায় গণহত্যা বলতে তিনি নারাজ। আর সে কারণে বিশ্বজুড়ে জেনোসাইড বন্ধ করার পাশাপাশি শব্দের ভুল ব্যবহারে যাতে এর গুরুত্ব হারিয়ে না যায় সে দিকটাতে লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন এই শিক্ষাবিদ, গবেষক।
আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মিয়ানমানে রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে তাকে জেনোসাইড বলতে হবে, এবং একই পরিস্থিতিতে যাতে তাদের আবার ফেরত যেতে না হয় সে জন্য বিশ্ব বিবেককেই কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জেনোসাইড ঘটে গেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে অনেক বেশি গবেষণা প্রয়োজন বলেও একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন এই বক্তা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠান শুরুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথাগুলো সামনে এনে বলেন, ‘আমাদের অন্তরকেই বিকশিত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তিনি বলেন, অধ্যাপক সিতারা পারভীন ছিলেন এমনই একজন বিকশিত মানুষ। তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক ছিলেন। তার গুণাবলী অনুসরণ করা আমাদের প্রয়োজন। অধ্যাপক সিতারা পারভীনের গুণাবলী ও নৈতিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন বলেও মত দেন ঢাবি উপাচার্য।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ সবাইকে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও উদার মনের মানুষ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মেহজাবিন বশির তুলি বলেন, ‘অধ্যাপক সিতারা পারভীন বৃত্তি সকল শিক্ষার্থীর জন্য একটি আলাদা অনুপ্রেরণা। আমরা সবাই এই বৃত্তিটি পাওয়ার প্রচেষ্টায় থাকি। এই বৃত্তি আমাদের সকলের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দেবে সেটাই প্রত্যাশা।’
সকলকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী পড়ে শোনান তার নিজের লেখা কবিতা ‘বধ্যভূমির নৈশব্দ’।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন অধ্যাপক সিতারা পারভীন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়ে এবং অধ্যাপক ড. আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী অধ্যাপক সিতারা পারভীনের স্মরণে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়।