Thursday 03 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগের দিন মারামারি, পরের দিন খুন


২৬ আগস্ট ২০১৯ ১৯:০২ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৯ ২১:০৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ছুরিকাঘাতে তরুণ খুনের নেপথ্যে বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের বিরোধের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে এই তরুণ ওই কলেজের ছাত্র ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন সড়কে ওমরগণি এমইএস কলেজের ফটকের অদূরে ইক্যুইটি ভবনের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার জাকির হোসেন জনি (১৮) সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার কলাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে জনি সবার ছোট। তারা ঢাকার মিরপুরে থাকেন।

জনি’র বড় বোন সিআইডি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দীনের স্ত্রী। থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে। জনি’র আরেক বোন মাহমুদা আক্তার ইন্নি পরিবার নিয়ে থাকেন ময়মনসিংহে।

বিজ্ঞাপন

মাহমুদা আক্তার ইন্নি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, জনি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে কুতুব উদ্দীনের বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। গতবছর তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার মিরপুরে নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে জনি ওই স্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়ছে। তবে জনির স্কুলের নাম বলতে পারেননি মাহমুদা।

তিনি জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাহমুদা ও তার স্বামী, জনি ও তার মা চট্টগ্রামে কুতুব উদ্দীনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। সোমবার রাতে তাদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। চট্টগ্রামে পড়ালেখা করার সময় এমইএস কলেজের আশপাশের এলাকায় জনি’র বেশ কয়েকজন বন্ধু ছিল। ঢাকায় ফেরার আগে সোমবার দুপুরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল জনি।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি) পরিত্রাণ তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমইএস কলেজের কাছে সড়কে ছুরিকাঘাতের পর কয়েকজন মিলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়। আমরা তার দুই পায়ে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।’

লাশের সুরতহালকারী খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নোমান জানান, জনির পিঠে, ডান পায়ের উরুতে এবং বাম পায়ের হাটুঁর নিচে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

এদিকে জনি’র মৃত্যুর খবর শুনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিনের অনুসারী। তাদের দাবি, জনি তাদের গ্রুপের কর্মী ছিল।

চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে তরুণ খুন

ওয়াসিম উদ্দিনের অনুসারী নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৌমেন বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় থেকেই জনি ছাত্রলীগ করত। আমাদের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যেত। আজ নাসিরাবাদে সাথী কমিউনিটি সেন্টারে আমরা জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম। জনিকেও সেখানে যেতে বলেছিল আমাদের কয়েকজন ছোট ভাই।’

হাসপাতালে গিয়ে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া জাহিদুল ইসলাম নামে একজন সাংবাদিকদের জানান, জনি ওয়াসিম গ্রুপের ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। রোববার এমইএস কলেজের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে মারামারি হয়। সেখানে জনিও ছিল। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে।

ওমরগণি এমইএস কলেজে ভিপি ওয়াসিম উদ্দিনের গ্রুপের ছাত্রলীগের পাশাপাশি সক্রিয় জিএস আরশাদুল আলম বাচ্চু’র অনুসারী একটি গ্রুপও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ছাত্রলীগের একজন সহ-সম্পাদক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (রোববার) দুপুরে ওয়াসিম গ্রুপের সঙ্গে বাচ্চু গ্রুপের ছেলেদের মারামারি হয়েছে। বড় কোনো বিষয় নয়, সিনিয়র-জুনিয়র কথা কাটাকাটি কিংবা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব। এরপর আজ (সোমবার) জনিকে একা পেয়ে বাচ্চু গ্রুপের দুজন যুবক ছুরিকাঘাত করেছে বলে জানতে পেরেছি।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে ছেলেটি খুন হয়েছে তাকে আমি কোনোদিন ছাত্রলীগের কোনো মিছিল-মিটিংয়ে দেখিনি। ব্যক্তিগতভাবে কোনো গ্রুপ করলে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু সে নগর ছাত্রলীগের কেউ নয়। আর ঘটনাও কলেজ ক্যাম্পাসে হয়নি। ছেলেটিও এমইএস কলেজে পড়ত না, বহিরাগত ছিল। এগুলো একান্তই কিশোর-তরুণদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুজন হত্যাকারীর নাম পেয়েছি। ঘটনাও আমাদের কাছে ক্লিয়ার। ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রোববার মারামারি হয়েছিল। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যে দু’জনের নাম পেয়েছি, তাদের গ্রেফতার করা গেলে, ঘটনা পুরোপুরি পরিস্কার হবে।’

পুলিশ ‍সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক যুবকের নাম আনিস। ওই যুবক এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের বাচ্চু গ্রুপের কর্মী। ছুরিকাঘাতের পর আহত জনিকে আবার আনিসসহ কয়েকজন মিলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের একটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, এক যুবক আহত জনিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসময় আরেক যুবককে লাল মোটরসাইকেলে করে তাদের পেছনে যেতে দেখা যায়। তবে যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তারা পরে সেখান থেকে পালিয়ে যায় বলেও পুলিশের সূত্রটি জানিয়েছে।

তবে জনি’র মা সাজেদা বেগম দাবি করেছেন, তার ছেলের সঙ্গে খুলশীর এক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। এটা নিয়ে জিইসি মোড় এলাকার রবিউল নামে এক ছেলের সঙ্গে জনির বিরোধ ছিল। ৪-৫ দিন আগে রবিউল তাকে প্রবর্ত্তক মোড়ে ডেকে নিয়ে মারধর করে। এই ঘটনার জেরেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

জনি’র ভগ্নিপতি সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে জনির মৃত্যুর পর চমেক হাসপাতালে যান নগর পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে জেনেছি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আমরা কিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই করছি।’

ওমরগণি এমইএস কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্র সংসদের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিন ও জিএস আরশাদুল আলম বাচ্চু প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কলেজটিও দীর্ঘদিন ধরে মহিউদ্দিনপন্থী ছাত্রলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

খুন টপ নিউজ তরুণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর