Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসামির জবানবন্দি: তরুণ খুনে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ


২৮ আগস্ট ২০১৯ ২১:৪২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে জাকির হোসেন সানি নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে ওই আসামি জানিয়েছেন যে, নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজে হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে হওয়া ‘ঝামেলার’ জের ধরে জাকিরকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা ওই কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলেও তিনি জানান।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমানের আদালতে জবানবন্দি দেন এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া মো.ফয়সাল আলম (১৯)। জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন সড়কে ওমরগণি এমইএস কলেজের মূল ফটকের অদূরে ইক্যুইটি অতিথি ভবনের সামনে খুন হন জাকির হোসেন সানি (১৮)। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে ফয়সালসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার ফয়সাল জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তিনি এমইএস কলেজের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। কলেজ ছাত্রলীগে তিনি আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী। গত সোমবার কলেজ ছুটির পর ‘রাজনৈতিক’ বড় ভাই বাচ্চুর অনুসারী আনিসের নেতৃত্বে তারা কয়েকজন কলেজ গেইটে জড়ো হন। এসময় জাকির সেখানে এসে আনিসের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। আনিস জাকিরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হেঁটে ইক্যুইটি অতিথি ভবনের সামনে যায়। ফয়সালরাও তাদের পেছনে পেছনে ওই স্থানে যায়।

ফয়সাল বলেন, ‘এসময় আনিস ভাই ছোট মামুন নামে একজনকে ডেকে বলে, এর নাম সানি, গতকাল (রোববার) এই ছেলেই ঝামেলা করেছিল। এসময় আমরা সবাই সানিকে ঘিরে ফেলি। সানি আমাদের ধমকের সুরে সরে যেতে বলে। তখন ছোট মামুন খেপে গিয়ে সানিকে ঘুষি মারে। আনিস ভাই, বড় মামুন, আয়াত, তুষার, নাজমুল, শাওন, সাব্বির, রবিন এবং আনিস ভাইয়ের অনুসারী প্রথম বর্ষের কিছু ছেলে সানিকে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। কিল, ঘুষি খেয়ে সানি একটু ঝুঁকে গেলে আনিস ছুরি দিয়ে সানির পিঠে ও (প্রকাশের অযোগ্য শব্দ) ছুরি দিয়ে ঘাই মারে। নাজমুল দৌড়ে এসে সানির পায়ে ছুরিকাঘাত করে।’

জবানবন্দিতে ফয়সাল আরও জানায়, আহত হয়ে জাকির (সানি) পড়ে গেলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। পরে তারা জানতে পারে, আনিস আহত জাকিরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে যাবার আগেই সানি মারা যায়।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাকির হোসেন সানি খুনের ঘটনায় আমরা এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছি। এদের মধ্যে ফয়সালকে গত (মঙ্গলবার) রাতে নগরীর টাইগারপাস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মামলার এজাহারে তার নাম না থাকলেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। ফয়সাল ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে সাব্বির নামে একজনকে আমরা আজ (বুধবার) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছি। কাল (বৃহস্পতিবার) তাকে আদালতে হাজির করা হবে।’

হত্যাকাণ্ডের শিকার জাকির হোসেন সানি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার কলাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সানি সবার ছোট। তারা ঢাকার মিরপুরে থাকেন।

জাকিরের বড় বোন সিআইডি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দীনের স্ত্রী। থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে। জাকিরের আরেক বোন মাহমুদা আক্তার ইন্নি পরিবার নিয়ে থাকেন ময়মনসিংহে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, জাকির চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে কুতুব উদ্দীনের বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। গতবছর তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার মিরপুরে নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। এবছর জাকির ওই স্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়ছিল।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাহমুদা ও তার স্বামী, জাকির ও তার মা চট্টগ্রামে কুতুব উদ্দীনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। সোমবার (২৬ আগস্ট) রাতে তাদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। চট্টগ্রামে পড়ালেখা করার সময় এমইএস কলেজের আশপাশের এলাকায় জাকিরের বেশ কয়েকজন বন্ধু ছিল। ঢাকায় ফেরার আগে সোমবার দুপুরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল জাকির।

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জানিয়েছিল, রোববার (২৫ আগস্ট) এমইএস কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুইগ্রুপে মারামারি হয়েছিল। এর জের ধরে সোমবার হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে জাকিরের মা প্রেম সংক্রান্ত বিরোধে জাকিরকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

এদিকে জাকিরকে নিজেদের গ্রুপের কর্মী বলে দাবি করে এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিনের অনুসারীরা হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরু থেকেই জিএস আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারীদের দায়ী করে আসছেন।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে জাকিরের বড় বোন মাহমুদা আক্তার ইন্নি বাদি হয়ে নগরীর খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন।

দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় করা এ মামলার আসামিরা হলেন- সৌরভ ঘোষ (২০), সৈয়দ সাফাত কায়সার (১৯), রবিউল (১৯), তূষার (২২), আনিসুর রহমান (৩০), আয়াতুল হক (২০) ও মো. মামুন (৩০)। এছাড়া আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর সৌরভ ও কায়সারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

এমইএস কলেজ চট্টগ্রামে তরুণ খুন ছাত্রলীগের একাংশ জাকির হোসেন সানি টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর