নিরাপদে আছে পথশিশু আনাস, কাল পাঠানো হবে সেফ হোমে
২৮ আগস্ট ২০১৯ ২৩:৪২
ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া পথশিশু আনাস এখন নিরাপদে আছে। শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে তাকে। আদালতের অনুমতি নিয়ে সেফ হোমে পাঠানোর কার্যক্রম এখন প্রক্রিয়াধীন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী।
আরও পড়ুন- ভুয়া সাংবাদিক-মানবাধিকারকর্মী, পথশিশুর উপার্জনে পকেটভারি তার
তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে আমরা আমাদের কাছে রেখেছি, নিরাপদেই আছে। মঙ্গলবার থেকেই ওর সার্বক্ষণিক সব খোঁজখবর আমরা রাখছি। আশা করছি, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে আমরা সেফ হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারব। আশা করা যায়, সেখানে সে ভবিষ্যতের দিনগুলো সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবে।’
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দেখা পাওয়া যায় পথশিশু আনাসের। সেখানে আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি তাকে মারধর করছিল। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্টাফ ও উপস্থিত সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, আলমগীর নামে ওই ব্যক্তি আনাসকে আশ্রয় দেওয়ার নাম করে তাকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতেন। পরে আনাসকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। আলমগীরকেও আটক করে পুলিশ।
মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনাস
কেবল আনাস নয়, মঙ্গলবার আরও এক পথশিশুকে পুলিশ পেয়েছে বলে জানান ওসি জানে আলম। তিনি বলেন, ‘গতকাল আরও একজন পথশিশুকে আমরা পেয়েছিলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করি এই দুই পথশিশুর পরিবারের খোঁজ নেওয়ার। ফরিদপুর থেকে এক পথশিশুর পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করে। তারা পরিচয় নিশ্চিত করে তাকে নিয়ে যায়। তবে আনাসের জন্য কেউ আসেনি।’
ওসি আরও বলেন, কেবল একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেই নয়, বরং রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবেও আমাদের দায়িত্বের জায়গা থাকে। সেগুলো আমরা পালন করে যাই। আনাসের বিষয়টিও তাই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ওর সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
বুধবার শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে দেখা যায়, আনাস থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার অফিসে দুপুরের খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই প্রতারক আলমগীরের খপ্পর থেকে তাকে উদ্ধার করায় সে ভীষণ খুশি।
প্রতারক আলমগীর হোসেন
নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনও মানবাধিকার সংগঠনের সংগঠক ও কখনো একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বলে দাবি করা প্রতারক হিসেবে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপরই আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
এর আগে, মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ আলমগীর একবার নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক, একবার সমাজকর্মী, একবার কৃষক লীগের নেতা। তিনি নিজে একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বলেও দাবি করেন। তবে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীরের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই। মাসখানেক হলো ওই ব্যক্তি তাকে নিজের কাছে রেখেছেন। তবে তাকে ব্যবহার করেই অর্থ উপার্জন করছেন আলমগীর। খেতে না দেওয়া, মারধরের অভিযোগও করে সে।
শিশু আনাসের অভিযোগ, তার সঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে এবং আলমগীরের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা নানা সময়ে তাকে বলাৎকারের চেষ্টাও করেছে।