মুক্তিযুদ্ধের শক্তির মধ্যে বিভাজন তৈরি করে জাসদের ৩ নেতা: নানক
২৯ আগস্ট ২০১৯ ১৮:৩৫
ঢাকা: স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার আগে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে বিভাজন সৃষ্টি করে দুর্বল করা হয়। এই বিভাজনের পিছনে জাসদের তৎকালীন তিন নেতা (তিন মাস্টার) সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রব ও মেজর জলিল দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় গ্রন্থাগার অধিদফতরের শওকত ওসমান মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক বলেন, ‘কারা হত্যা করল? যখন প্লট তৈরি করা হয়েছে, তখন আমাদের নেতৃত্ব কোথায় ছিল? যখন প্লট তৈরি করা হয়েছে, তখন আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এবং যাদের কর্তৃত্ব দেওয়া ছিল তারা কোথায় ছিল? এ প্রশ্ন আমার থেকে যাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর আমরা কাদের দেখেছি? কর্নেল ফারুক, রশিদ, মেজর ডালিম, শাহরিয়ার, নূর, মোশতাক, জিয়াউর রহমানদের। কিন্তু এই কজন ছিলেন অপারেশনাল টিমের সদস্য। এই অপারেশনাল টিমের পিছনে যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন, ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সঙ্গে পরাজিত হয়েছিল। সেই পরাজিত শক্তি মেনে নিতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকে। আর মেনে নিতে পারেনি বলে এই দেশের রাজাকার-আলশামস আর পাকিস্তানি ধ্যান ধারনার মানুষগুলো তারা চুপিসারে বসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আর যোগসাজশ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হল। বিভাজন সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে দুর্বল করা হল। কারা করল সেই বিভাজন? সেই বিভাজনের তিন মাস্টার পল্টনে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত দেখে মনে করেছে এই মানুষ সব জাসদের। আসলে স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতাকারী, সেই কারণেই তারা শত্রুর শত্রু, শত্রুর মিত্রের এই জমায়েত যেতেন (হতেন)। আর ওই উপস্থিতি দেখেই ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে নানক বলেন, ‘আমাদের শত্রু-মিত্রকে চিনতে হবে। আজও দুটো বিষধর সাপ আমাদের সঙ্গে পথ চলছে। আমি একদিন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বলেছিলাম, বন্ধুরা একটি অজগর সাপ আমাদের সঙ্গে পথ চলছে আন্দোলনের নামে। এই অজগর সাপ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে। যখন সুযোগ পাবে তখনি আমাদের ওপর ছোবল হানবে। আমি সেই অজগর সাপকে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলাম জামায়াত-শিবির।’
আজকে বাংলাদেশে সেই বিষধর সাপের অবস্থান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আত্মতৃপ্তি, আত্ম অহমিকায় ভুলে থাকলে হবে না। আমরা ক্ষমতায় আছি মোট আগে একবারসহ মোট চার বার। এই ক্ষমতার আত্মপ্রসাদে থাকলে হবে না, সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই বিষধর সাপেরা তারা যখন আমাদের ঐক্যবদ্ধতা দেখে, তারা যখন জনগণের কোলাহল দেখে, তারা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষের জয় বাংলা স্লোগান শোনে তখন তারা গর্তের ভিতরে ঢুকে যায়। যখনি দেখে আমাদের অনৈক্য, অসর্কতা, তখনই ওরা এসে পিছন থেকে আমাদের ছোবল মারে।’
বিএনপি জামায়াত জোট শাসনামলে সারাদেশে একযোগে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা ও ২১ শে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার নৃশংসতার ঘটনা তুলে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা এসব ঘটিয়েছে, তারা বলেন মৌলিক অধিকার সরকারের দমন-পীড়নে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব একটু আগেও বলেছেন।’
নানক প্রশ্ন উত্থাপন করে আরও বলেন, ‘কার মৌলিক অধিকার? কার মৌলিক অধিকার চান আপনি? পেট্রোল বোমা মেরে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের মৌলিক অধিকার চান? এই দেশে তারেক রহমান ফিরে আসবে আর এস এম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করবে? সেই অধিকার চান।‘
তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব আমাদের দোষ দিয়ে কী লাভ। আপনারা মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেছেন। মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। আর মানুষ থেকে যেহেতু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সেই কারণে আন্দোলন-আন্দোলন খেলা আর হবে না।’
বিদেশে পলাতক দণ্ড পাওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকরের লক্ষ্যে সরকারের কাছে দাবি জানান এই নেতা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। তেমনিভাবে পৃথিবীর যেসব জায়গায় গিয়ে খুনীরা আশ্রয় নিয়েছে সেই দেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে হবে। শুধু তাদের ফাঁসি কার্যকর করা নয়, এর পিছনে যে আন্তর্জাতিকভাবে যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ‘পাক-মার্কিন’ শক্তি জড়িত ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, একুশে পদকপ্রাপ্ত কলামিস্ট ও সাংবাদিক স্বদেশ রায়, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ অনেকে।