মুগদা হাসপাতালে এখনো ২৫৭ ডেঙ্গু রোগী
৩০ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৪১
ঢাকা: খাদিজা আক্তার শান্তা। টিকাটুলি সেন্ট্রাল মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর ধলপুরে থাকেন। গায়ে জ্বর নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ভর্তি হয়েছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেডিসিন ওয়ার্ডের ফ্লোরেই রাখা হয়েছে শান্তাকে। আশপাশের বেডগুলো রোগীতে পূর্ণ। তারপরও চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ আগের চেয়ে অনেকটাই কম।
অর্থাৎ ঈদের আগে পুরো জুলাই মাস মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর যে উপচে পড়া ভিড় ছিল, সেই অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মুগদা হাসপাতালের ৬০ আসন বিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ডে এখনো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬২টি। সমান সংখ্যক আসন বিশিষ্ট মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৯৫ জন!
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসাধীন ১৬৬ জন রোগীর মধ্যে ৬২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এদের কেউ বেডে, কেউ বা ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। উৎকণ্ঠিত বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন রোগীদের বিছানার পাশে বসে রোগমুক্তি কামনায় দিন কাটাচ্ছেন।
শিশু ওয়ার্ড থেকে এক ফ্লোর ওপরে মেডিসিন ওয়ার্ড। ৬০ শয্যার এই ওয়ার্ডে মোট রোগীর সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৫ জন। জুলাই মাসের শেষের দিকে এই ওয়ার্ডে শুধু ডেঙ্গু রোগীই ছিল সাড়ে তিন শতাধিক। সে সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বেশ ভালোই’ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ৬০ শয্যার ওয়ার্ডে ১৯৫ ডেঙ্গু রোগীসহ ৩২১ জন রোগী নিয়ে যেসব চিকিৎসক-নার্স কাজ করছেন, তাদের কাছে বিষয়টি মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। আবার রোগীদের দুর্ভোগও যে খুব একটা কমেছে, সেটিও মনে করছেন না রোগীর স্বজনরা।
ফ্লোরে চিকিৎসাধীন খাদিজা আক্তার শান্তার বাবা মো. আয়নাল ব্যাপারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত রাতে আসার পরই ভর্তি নিয়েছে। কিন্তু বেড দিতে পারেনি। তাই ফ্লোরে থাকতে রাখতে হয়েছে শান্তাকে। বেড খালি হলে বেডে দেবে।’
গায়ে জ্বর থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী সালেহা বেগমকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটছে তার। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন বারবার। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ চিন্তিত দেখালো মো. দেলোয়ার হোসেনকে।
সারাবাংলাকে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত রাতে এসেই রক্ত পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। আজ বিকেল নাগাদ রিপোর্ট আসার কথা। ডাক্তাররা বলছেন, এটা ডেঙ্গুর লক্ষণ। ভয়ে আছি। দোয়া করবেন।’
এদিকে নতুন এই রোগীদের চেয়ে পুরোনো রোগীর সংখ্যাই বেশি মুগদা হাসপাতালে। শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন রোগী খুব বেশি ভর্তি হয়নি। বেডে, ফ্লোরে, ফাঁকা জায়গায় যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই রিলিজ নিয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায়।
কথা হয় শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে। উত্তর মুগদার এই বাসিন্দা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ রিলিজ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নার্সরা বলেছেন, শুক্রবার হওয়ায় আজ আর রিলিজ হবে না। শনিবার সকালে রিলিজ দিয়ে দেবে।’
এদিকে গত দুই মাস ধরে ডেঙ্গু নিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে কাটিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মুগদা হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. খায়রুল আলম। সম্প্রতি মাইল্ড স্ট্রোক করেন তিনি। এই মুহূর্তে বাসায় বিশ্রামে আছেন।