Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চরম দুঃসময়ে নেতাকর্মীরা আ.লীগকে আগলে রাখে’


৩০ আগস্ট ২০১৯ ২২:৫৮

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই কিন্তু সব সময় চরম দুঃসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটাকে ধরে রাখে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। যে কারণে এই দলকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব দরবারে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ আর কখনো যেন ওরকম হায়েনাদের হাতে না পড়ে, এই ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।

২০০৮ থেকে এই পর্যন্ত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অগ্রতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছিলাম, স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি একে একে সব ধ্বংস করে দিল। ঠিক জিয়াউর রহমান যেভাবে খুনীদের পুরস্কৃত করেছিল আর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছিল খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে তাই করল।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটা নির্বাচন করেছিল, যে নির্বাচনের বদৌলতে সে বলে থাকে তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। সেই ভোটচুরি করে এই খুনি কর্নেল রশিদ, মেজর হুদা, হুদার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, রশিদ পলাতক। যতদূর সম্ভব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়ে আছে। সেই রশিদকে এবং হুদাকে খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য করে আমাদের সংসদের পবিত্রতা শুধু নষ্ট করেনি, রশিদকে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছিল। জিয়াউর রহমান যেমন খুনীদেরকে পুরষ্কৃত করল। খালেদা জিয়াও ঠিক একইভাবে এই খুনীকে পার্লামেন্টে নিয়ে আসল ভোট চুরি করে। তাহলে বিএনপি যে খুনীর দল না, সে কথা তারা বলে কি করে। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদেরকে এনে বসাল পার্লামেন্টে।’

যে দলের নেত্রী, যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে পুরষ্কৃত করল। তাহলে সে দল খুনীর দল না তো কিসের দল সেটাই প্রশ্ন? যেখানে মামলার রায় হবে তারিখ দিয়েছে, সেখানে সেই আসামি আবার চাকরিতে পুর্নবহাল হয় আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি মৃত তার পেনশনের টাকা কিভাবে দেয় বলেও সমালোচনা করেন তিনি।

খুনীদের হাতে তারা যখন এইভাবে পতাকা তুলে দেয় আর মন্ত্রী বানায় তাহলে এরা খুনীর দল ছাড়া আর কি? কাজেই তাদের জন্মটাই হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। আর সেই চরিত্রটা তাদের একটুও বদলায়নি বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

এরশাদও সেই খুনীদের মদদ দিয়েছে, পুরষ্কৃত করেছে এবং ফারুককে সংসদে এমপি করে আনারও চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নাই। রাষ্ট্রপতি প্রার্থীও করেছিল কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। এরা যারা ৭৫-এর পর ক্ষমতায় এসেছে, সবাই খুনীদেরকে মদদ দিয়েছে। আর কাকে খুশি করতে চেয়েছে, সেটা ভালো করেই বুঝতে পারেন। আর দেশের উন্নয়নটা স্থবির করে দিয়েছিল।

তাই ২৮ থেকে ২৯ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। পরিবর্তনটা তখনই হয়েছে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে তখনই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। যে শক্তিকে আমরা পরাজিত করেছিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধে। সেই পরাজিত শক্তিকে খুশী করার জন্য। তাদের মনোতুষ্ঠির জন্য এই দেশটাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে তারা পর্যবসিত করতে চেয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যহত করার অনেক প্রচেষ্টা, মিথ্যা অপবাদ অনেক কিছুই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি কথাই বলব, যেহেতু বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছিলাম, হারাবার আর কিছু নেই। আর কিছু চাওয়া-পাওয়া রেখে রাজনীতি করি না। আর ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সাথে জড়িতই ছিলাম। দেখেছি আমার বাবা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছেন। নিজের জীবনের কিছু হবে, ভাগ্য গড়বেন সেই চিন্তা তিনি কখনো করেন নাই। আর তাছাড়া সততাটাই হচ্ছে শক্তি। যে শক্তি হাতে থাকলে কথা বলা যায়, যেকোন অবস্থা মোকাবেলা করা যায়। এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ করেছি বলেই আজকে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পেরেছি এগিয়ে যাচ্ছে।

দলীয় নেতকার্মীদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করতে যেয়ে কত রকম চক্রান্ত, কত রকম ষড়যন্ত্র কত কিছু মোকাবেলা করতে হয়, সেখান থেকে কিভাবে তিনি দেশকে নিয়ে এসেছেন ৭০ নির্বাচনের বিজয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে, এই বইটি পড়লে সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

জাতির পিতারর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে সিক্রেটস অব ডকুমেন্ট প্রকাশের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, বলতে গেলে প্রায় বিশটা বছর এই ফাইল নিয়ে আমরা কাজ করি। একদিকে ওনার ডায়েরি নিয়ে সঙ্গে ফাইলগুলো নিয়ে। এরপরে যখন ২০০৯ সালে সরকারে আসি তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এগুলো আমি প্রকাশ করবো। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম কোনো দৃষ্টান্ত নেই কোনো নেতার বিরুদ্ধে লেখা কোনো রিপোর্ট কেউ কখনো প্রকাশ করেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হচ্ছে যে, এত কষ্ট করে দেশটাকে স্বাধীন করে জাতির পিতা দিয়ে গিয়েছিলেন তার যে লক্ষ্য ছিল, সেই লক্ষ্যটা অর্জন করা।

এব্যাপারে দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলীয় সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই কিন্তু সবসময় চরম দুঃসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটাকে ধরে রাখে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। যে কারণে এই দল ধ্বংস করতে আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়া চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। পারেনি কারণ এর শিকড় বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে যেহেতু প্রোথিত সেজন্যই পারেনি।

‘আওয়ামী লীগ যখনি সরকারে আসে দেশের মানুষের উন্নতি হয়, দেশের মানুষের অগ্রযাত্রা শুরু হয়’ দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। এই আগস্ট মাসটা আমাদের জন্য একটা বিরাট শোকের পাথর বুকে নিয়ে শুরু হয়। যা আমাদের জন্য সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন। তারপরও আজকে যখন বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি চলে গেছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক এক ভাগে উন্নীত করেছি। সেখানে মূল্যস্ফীতি আমরা পাঁচ দশমিক পাঁচ ভাগে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আজকে সব দিক থেকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু এইটুকু মনে হয় যে, ৪৪ বছর হল জাতির পিতা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু এত বছর পরে তার আত্মা এবং আমার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে, তার দেশের মানুষ এখন আর সেই আগের মতো ক্ষুধার জ্বালায় কাতর হয় না। রোগে ধুকে ধুকে মারা যায় না। লেখাপড়া শিক্ষা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ব্যবস্থা করতে পেরেছি।

‘কিন্তু আমাদের আরও কাজ করতে হবে। দেশকে আরও উন্নত করতে হবে। আমরা যে লক্ষ্যগুলি স্থির করেছি, সেই লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই শোক-ব্যাথা নিয়েও আপনারা বুঝতে পারেন, মানুষ যেখানে একটা শোক সইতে পারে না, আর আমরা একই দিনে দুইটি বোন শোক নিয়ে যে কাজ করি, এই যে এখানে তাপস বসে আছে, তিন বছরের বাচ্চা ছিল। সে দেখেছে তার বাবা-মার লাশ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ১৫ আগস্ট অনেকেই আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু সেটার ব্যথা-বেদনা বুকে নিয়েও তো আমরা শুধু দেশের কথাচিন্তা করি, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করে যাচ্ছি। এই দেশের মানুষ একটু ভালো থাকলে, আমাদের মহান নেতা জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।

‘আমরা যে শুধু বাবা-মা হারিয়েছি তা না তো। বাংলাদেশের মানুষ তো হারিয়েছিল, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা, উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা। তাদের জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ করার সকল সম্ভাবনা হারিয়ে গিয়েছিল। আজকে আমরা তা পুনরায় ফেরত আনতে পেরেছি। এখান থেকে যেন আর বাংলাদেশ কখনো ওরকম হায়েনাদের হাতে না পড়ে, এই ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তররে সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ঢাকা মহানগর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, উত্তরের সহ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, জাহানারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান (কচি) ও কামাল চৌধুরী।

সভা পরিচালনা করেন মহানগর উত্তরের সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন এবং আজিজুল হক রানা। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

আ.লীগ নেতাকর্মী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর